পুরস্কার পেতে ভালো লাগে সবারই। তবে সেটা যদি হয় কর্মক্ষেত্রে এবং জাতীয় পর্যায়ে তাহলে তো সেখানে আর দ্বিতীয় কোনো কথাই থাকে না। তেমনি একজন হলেন শাহনাজ কবীর। যিনি কিশোরগঞ্জ এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি দেশসেরা প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে পুরস্কারও পেয়েছেন। বুধবার (২৬ জুন) শাহনাজ কবীর এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। তবে পুরস্কার হিসেবে তাকে যে সনদ, মেডেল এবং ক্রেস্ট দেয়া হয়েছে সেগুলো সবই ভুলে ভরা।
‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’ উপলক্ষে ২০ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে। ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। কিন্তু পুরস্কার হিসেবে তাকে যে সনদ, মেডেল ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছে তাতে রয়েছে একাধিক ভুল। এ জন্য ক্ষুব্ধ কিশোরগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ও এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর।
এসব ভুল সংশোধনের জন্য তিনি বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিষয়টি জানানোর জন্য পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাউকেই পাননি তিনি। ফলে ভুলে ভরা পুরস্কার নিয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে শাহনাজ কবীর জানান, প্রথমে ভুলের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়নি। পরে বাসায় ফিরে দেখেন, তিনটি পুরস্কারেই অনেক ভুল রয়েছে। যেমন তিনি এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সনদপত্রে ‘এস ভি’ না লিখে লেখা হয়েছে ‘এম ভি’, আবার বিদ্যালয়টি কিশোরগঞ্জের হলেও সনদে লেখা হয়েছে ‘ময়মনসিংহ’। আবার তার জন্য তৈরি একমাত্র মেডেলেও বিদ্যালয়ের নাম ‘এস ভি’ না লিখে ‘এম ভি’ লেখা হয়েছে। বালিকার জায়গায় ‘বালিক’ লেখা হয়েছে। একই ধরনের ভুল ক্রেস্টেও রয়েছে।
এছাড়াও তিনি আরও জানান, জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারে এত ভুল মেনে নেয়াটা কষ্টকর। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি বিদ্যালয়ের নাম-ঠিকানাসহ সবকিছু আগেই সঠিকভাবে লিখে জানিয়েছিলেন। পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে দেয়া চিঠিতেও বিদ্যালয়ের নাম-ঠিকানা ঠিকঠাক ছিল।
তবে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, শাহনাজ কবীর ২০০৬ সালের ৬ মার্চ এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাঁর নেতৃত্বে এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দু’বার এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। এরপর ২০১৫ সাল থেকে শতভাগ পাস ও সর্বাধিক জিপিএ ৫-এর কৃতিত্ব দেখিয়ে জেলায় ধারাবাহিকভাবে প্রথম স্থান দখল করে আসছে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও এই ধারা অব্যাহত রেখে বিদ্যালয়ের মোট ২৩৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৬ জন জিপিএ ৫ সহ শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করে। একাডেমিক এই ফলাফলের বাইরে শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্য অঙ্গনেও প্রতিষ্ঠানটি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।