Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যন্ত্রণা সহ্য হয় না, হাত কেটে ফেলে দেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০১৯, ০৮:২৪ PM
আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯, ০৮:২৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সারাদেশে আলোচনায় এসেছিলেন সাতক্ষীরার আবুল বাজনদার। তার দুই হাত ও শরীর গাছের আকৃতির হয়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল হাসপতালে এর আগে অপারেশন করা হয়েছিলো। কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।

হাতে পায়ে শেকড়ের মত মাংসপিন্ড গজানোর কারণে কারো কাছে তিনি ‘বৃক্ষমানব’, আবার কারো কাছে তিনি ট্রি ম্যান হিসেবে পরিচিতি পান।

সরকারের সহায়তায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ণ ইউনিটে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন সুস্থ্য সুন্দর স্বাভাবিক জীবন গড়ার। কিন্তু তা আর হলো কই!

আবারো সেই পুরনো রোগ, পুরনো যন্ত্রণা। শেকড় যে তাকে এতো ভালোবেসেছে, যে তাকে ছেড়ে যেতেই পারছে না। আবার শেকড় গজিয়েছে।

বাজনদারের যে দুই হাত বাঁচাতে চিকিৎসকেরা ২৫ বার অস্ত্রোপচার করেছিলেন, সেই হাতই এখন কেটে ফেলতে চাচ্ছেন আবুল।

সোমবার তিনি বলেন, ‘আগের মতো হাতে শেকড়-বাকড় লম্বা হচ্ছে। খুব জ্বালা যন্ত্রণা করে। সহ্য করতে পারি না ভাই। এজন্য গত ১৯ মে আবারো বার্ণ ইউনিটে এসে ভর্তি হই। গতকাল (রোববার) ডাক্তারকে বলছি, আমার হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে দেন। পায়ে অপারেশন করতে বলছি যাতে এলাকায় গিয়ে একটু হাঁটতে পারি। কিন্তু ডাক্তাররা তো রাজি হচ্ছেন না। আমি বলছি যে যদি এটাও না করেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আমাকে যাতে বিদেশে পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন পৃথিবীর কোথাও নাকি এই রোগের চিকিৎসা নেই। যতবার শেকড়-বাকড় বাড়বে ততবার অপারেশন করে ফালাতে হবে। যতদিন বাঁচব, ততদিনই এভাবে অপারেশন করতে হবে। খুব কষ্ট হয় ভাই, খুব কষ্ট। এভাবে আর কতো দিন বাঁচবো!’

 

নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বাজনদার জানান, তাহিরা (জান্নাতুল ফেরদাউস তাহিরা) নামে আমার ছয় বছর বয়সী মেয়ে আছে। কিন্তু তাকে কোলে নিতে পারি না। আদর করতে পারি না। এই হাত রেখে কী করব? ফেলে দিলে অন্তত অসহ্য যন্ত্রণা থেকেতো মুক্তি পাব!

হাসপাতালে আসার পর তিনটা টেস্ট করানো হয়েছে আবুল বাজনদারের। তার সঙ্গে রয়েছেন তার বাবা-মা।

তিনি বলেন, আমি সামন্ত স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। স্যার বলেছেন, কালকে মেডিক্যাল বোর্ড বসবে। সেখানে যদি হাত কাটার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তারা হাত কেটে ফেলবে। আর যদি অন্য সিদ্ধান্ত হয়, সে ভাবেই আমার চিকিৎসা চলবে।

আবুল বাজনদার বলেন, আমার এটা দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা। আমার সঙ্গে হাসপাতালে এক বা দুইজন লোক থাকতে হয়। মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় আমি এ পর্যায়ে এসেছি। আমার কোনো সামর্থ্য নাই। হাসপাতালে রোগী হিসেবে শুধু আমাকে খাবার দেওয়া হয়। এখন বাবা-মা আমার সঙ্গে আছেন। তাদেরকে খাবার দেওয়া হয়না। আবার আমার বাহির থেকে খাবার কিনে আনার সামর্থ্য নেই। এ ব্যাপারে হাসপাতাল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাহলে দিনের পর দিনে আমি কিভাবে এই খরচ করবো। আমার তো সেই সামর্থ্য নেই।

আবুলের হাত কাটার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মঙ্গলবার আমরা মেডিক্যাল বোর্ড নিয়ে বসব। সেখানে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেভাবেই তার চিকিৎসা দেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম বার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আবুল বাজনদারকে ভর্তি করা হয়।

এরও প্রায় ১০ বছর আগে তিনি এই রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বিয়েও করেন তিনি।

Bootstrap Image Preview