Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিআরটিসির নতুন বাসের ছাদ ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে ভেতরে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০১৯, ০৬:৫৫ PM
আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯, ০৭:২৪ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি সেবার মান উন্নয়নের জন্য তাদের বহরে ক্রমাগত যুক্ত করে চলেছেন নতুন নতুন বাস। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নিচ্ছেন নানা ধরণের উদ্যোগ। কিন্তু এর পরও প্রতিবছরই এই খাতে তাদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়।

দেশের পরিবহনখাতে অপার সম্ভাবনা থাকার পরও কেনো এই খাতটিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটিকে লোকসান গুনতে হয় প্রতি বছর এ প্রশ্নের জবাবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বরাবরই সংস্থাটির অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করে আসছেন।

সংস্থাটির সেবার পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়েছে ভারত থেকে আনা বেশ কিছু নতুন বাস। কিন্তু বাস আনার পর মাস পার না হতেই দেখা দিয়েছে বাসের ছাদে ফুটো। সেই ফুটো দিয়ে বৃষ্টি হলেই অনর্গল পানি পড়ছে। ক্রমাগত বৃষ্টির পানিতে ভিজে বাসের সিটও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদিও বাসগুলো কেনার আগে বাসগুলোর মান ঠিক আছে কিনা তা দেখতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যানসহ বহু কর্মকর্তা একাধিকবার ভারতে গিয়েছিলেন।

ভারতীয় টাটা কোম্পানির কাছ থেকে ১০০টি বাস কিনেছে বিআরটিসি। কিন্তু সম্প্রতি গাবতলী বাস ডিপোতে বিআরটিসির একতলা বাসের ছাদ ফুটো হয়ে যাওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। পরবর্তীতে দেখা যায় গত ১০ মে ওই ডিপোতে বরাদ্দ দেওয়া ৮টি বাসের সবকয়টিতেই একই অবস্থা।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গাবতলী বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান জানান, বৃষ্টির পানি ছাদের ফুটো দিয়ে সিটে গড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান তাকে আর কিছু জানাননি।

বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, বাসগুলোতে বৃষ্টির সময় ভেতরে পানি পড়ছিলো। এরপর তারা খুঁজে দেখেন বাসের ছাদ ফুটো হয়ে গেছে। বাসের ছাদে যে এমএস শিট লাগানো হয়েছে তা অতিমাত্রায় পাতলা হওয়ার কারণে শিট ছিঁড়ে গেছে। যে কারণে সিলিং বেয়ে পানি পড়ছে।

একতলা বাসের আরও ত্রুটি ধরেছে ডিপোর কারিগরি শাখা। তারা বলছে, বাসে এমএস শিট আর ‘রিভিট’ যথাযথভাবে লাগানো হয়নি। এগুলো আলাদা রয়ে গেছে। যে কারণে বাস চলার সময় বিকট শব্দ করছে।

ডিপো ম্যানেজার মনিরুজ্জামান জানান, বিআরটিসি এসব বিষয় নিয়ে টাটা কোম্পানির সঙ্গে বসবে– এমনটাই শুনেছেন তিনি।

বাসের মান ঠিক হলো কিনা এবং যে স্পেসিফিকেশন বাংলাদেশ যেমন চেয়েছে তেমন হয়েছে কিনা সেসব দেখতে বাস কিনে আনার আগে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ভারত গিয়েছিলেন। বিআরটিসির বহু কর্মকর্তাও ভারত গিয়েছিলেন স্পেসিফিকেশন এবং প্রি ইন্সপেকশনে। তারপরও বাসের কেন এমন হাল জানতে চাইলে বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, একতলা গাড়িগুলোর ইঞ্জিন টাটার এবং বডি নির্মাণ করেছে এসিজিএল কোম্পানি। দুই বছরের ভেতরে যা সমস্যা হবে তা তারা দেখবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ছাদ ফুটো হয়ে পানির পড়ার ঘটনায় টাটা কোম্পানিকে ডাকা হয়েছে। তারা আসবে।

স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বাস কেন দেওয়া হলো না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বডি শিটের থিকনেস তারা কম দিয়েছে। তবে থিকনেস কম হলেও এটার ওয়ারেন্টি ভালো। মানের দিক থেকে খারাপ বাস দেয়নি বলেও দাবি করেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান।

এছাড়া বাসের সিটের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত চাহিদা অনুযায়ী সিট দেয়নি ভারত। এতেও চুক্তি অনুযায়ী স্পেসিফিকেশন মানা হয়নি। এ বিষয়টিও স্বীকার করেছেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান।

রাষ্ট্রয়ত্ত্ব পরিবহন প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে। মন্ত্রণালয়ে বিআরটিসি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন যুগ্ম সচিব ড. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিআরটিসির সঙ্গে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাদ ফুটো হয়ে যাওয়া ছাড়াও বিআরটিসি ভারত থেকে নতুন যে বাস ও ট্রাকগুলো নিয়ে এসেছে সেগুলোর চালকদের কাছ থেকে আরও ত্রুটির তথ্য পাওয়া গেছে। চালকরা জানান, ট্রাকে টুলবক্স দেওয়া হয়নি। এসি বাসের সামনের অংশে এসিও চলে না। পাশাপাশি বাসের নিচের বডিতে কাঠ দেওয়া হয়েছে। এ যুগে কাঠের বাস কোথাও নেই, তারপরও ভারত থেকে একের পর এক কাঠের বাস আনছে বিআরটিসি।

এ বিষয়ে খোদ বিআরটিসির এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষ মেকানিক, অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ, সিদ্ধান্তের অভাব ও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির কারণেই বাসের এই বেহাল অবস্থা।

Bootstrap Image Preview