Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চীনা-বাঙালি-পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, ভাঙচুর-লুটপাট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০১৯, ০৭:৫৭ PM
আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯, ০৭:৫৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে একজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জের ধরে একজন চীনা নাগরিক নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই ত্রিমুখি সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য, সাত চীনা নাগরিক এবং বাঙালিসহ অসংখ্য আহত হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন চীনা নাগরিক এবং একজন বাঙালিসহ ৮ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশের পিকআপ এবং মোটরসাইকেল। এ নিয়ে ঐ এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালের দিকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্রয়লারের উপর (প্রায় সাত তলার সমান উচু) থেকে পড়ে এক বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত চীনাদের দাবি, ঐ শ্রমিক অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে গিয়ে মারা যায়। তবে বাঙালী শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, ব্রয়লারের উপর থেকে ঐ শ্রমিককে এক চীনা নাগরিক লাথি দিয়ে নীচে ফেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। এ ঘটনার পর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে নিহত শ্রমিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে অন্যান্য বাঙালি শ্রমিকরা। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।

এ ঘটনার পর দিনভর চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। এর জের ধরে শেষ বিকেলে বাঙালি শ্রমিকদের সাথে চীনাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এসময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় বাঙালিরা। তারা ব্যাপক ভাঙচুর এবং মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশের যানবাহনও।

দফায় দফায় সংঘর্ষে তিন পুলিশ এবং সাত চীনা নাগরিকসহ অসংখ্য আহত হয়। তাদের মধ্য থেকে সাত চীনা এবং এক বাঙালিসহ ৮ জনকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই শের-ই-বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চীনা ও বাঙালিদের দেখতে আসেন পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হেমায়েত উদ্দিন।

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান জানিয়েছেন, একজন বাংলাদেশী শ্রমিক মঙ্গলবার বিকেলে নিহত হন। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত একজন চীনা শ্রমিক বুধবার সকালে বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার বিকেলে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাবিন্দ্র দাস নামে একজন বাংলাদেশী শ্রমিক উপর থেকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর এ নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চীনা শ্রমিকদের সঙ্গে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রথমে তর্ক-বিতর্ক পরে মারামারি লেগে যায়।

এতে আটজন বাংলাদেশী শ্রমিক এবং ছয়জন চীনা শ্রমিক আহত হন বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর রাতে আহতদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

পরে বরিশালে বুধবার ভোরে একজন চীনা শ্রমিক মারা যান। তার নাম জাং ইয়াং ফাং। আহত বাকি চীনা শ্রমিকদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পায়রার ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে মোট ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন, এর মধ্যে দুই হাজারের বেশি চীনা শ্রমিক ও প্রকৌশলী রয়েছেন। এই ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি, তবে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পটুয়াখালীর পুলিশ।

এদিকে সংঘর্ষের পর কলাপাড়ায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফের সংঘাতের আশংকায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।

Bootstrap Image Preview