দুই সন্তান স্বচ্ছল থাকলেও খোঁজ নেয় না ৭০ বছর বয়সী মোহাম্মাদ জামিলুর রহমানের। ধার দেনা করে দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে দেড় লাখ টাকা ঋণ হয়ে পড়েন জামিলুর। বৃদ্ধ বয়সে কোনভাবেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না।
এরই মধ্যে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে মারাত্মত আহত জামিলুর। কোমরে আঘাত পাওয়ায় প্যাডেল চেপে আর রিকশা চালাতে পারছেন না। রিকশার চাকা থেমে যাওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও চার সন্তানের সংসারের চাকাও বন্ধ হয়ে যায় তার। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না জামিলুর।
শুক্রবার অসহায় জামিলুর ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি জামিলুরকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা উপহার দিলেন। এতে আর প্যাডেল চাপা লাগবে না তার।
ছাত্রলীগ সম্পাদকের এ সহযোগিতা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা জামিলুর তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। এ সময় খুশিতে তাকে রিকশা করে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ান। তিনি বলেন, ‘এই রিকশা আমার ও আমার পরিবারের অবলম্বন। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতাম। কিন্তু গাছ ভেঙ্গে পড়ায় কোমরে ব্যথা পেয়ে এখন আর প্যাডেল চাপতে পারি না। জীবনটা থেমে গিয়েছিল। এখন সে জীবন সচল করলেন ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী।
জানা যায়, ঋণ পরিশোধের আশায় কিশোরগজ্ঞ জেলার নীলফামারী এলাকার নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন রাজধানীতে। রাজধানীতে ভাড়াচালিত একটি পায়ে চালানো রিক্সা নিয়ে শুরু করেন রোজগার। ঋণ পরিশোধ করার যুদ্ধ। তবে সে রোজাগারের টাকা দিয়ে নিজে থাকা খাওয়ার পর কোনভাবেই ঋণ পরিশোধ হতে পারছিলেন না। কোন এক মানুষের তাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে দেখা করে ঘটনা জানাতে বলেন।
এরপর জামিলুর রহমান ১৫ রমজানে দেখা করেন গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে। বলেন তার অসহায়ত্বের কথা। জানান, পাঁচ বছর আগে গাছের ডাল পড়ে কোমড় ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও। সব জানার পর ঘটনা সত্য হলে সমাধানের আশ্বাস দেন গোলাম রাব্বানী।
ভাড়া চালিত রিক্সার বদলে একটি রিক্সা কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপরই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে নেমে পড়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনার সত্যতা মিলে যায়।
এসব কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আরও বলেন, ঘটনাটি আমাকে জানানোর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই ইব্রাহিম হোসেনকে সত্যতা যাচাই করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় ঘটনা সত্য।
এরপর আমিসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিলে একটি রিক্সা ক্রয় করা হয় জামিলুর রহমান চাচার জন্য। শুক্রবার বেলা ২টার দিকে পরীবাগ এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি ডিজিটাল রিক্সা তুলে দেওয়া হয় জামিলুর রহমানের হাতে।
এখন থেকে নিজের রিক্সা চালিয়ে ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করবেন তিনি।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশরত্নের ছাত্রলীগ, মানবতার ছাত্রলীগ। সব সময় মানুষদের জন্য কাজ করবে। মানুষের সেবা করবে।
কিছুদূর জামিলুর রহমানকে রিক্সায় তুলে নিয়ে রিক্সা চালান ছাত্রলীগ সম্পাদক। এরপর রিক্সাটি জামিলুর রহমানের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া প্রার্থনা করা হয়।
কিশোরগজ্ঞের জামিলুর রহমান ছাত্রলীগ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। বলেন, চির ঋণী থাকবো আমি। এবার আমি আমার দুই মেয়ে বিয়ে দেওয়া ঋণ হয়তো পরিশোধ করতে পারবো।
সে সময় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পেরে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও আনন্দে রিকশা চালিয়ে দেখেন। তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ জামিলুর ভাই, উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বানিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। হত-দরিদ্র মানুষটা রিকশা চালিয়ে টেনেছেন পুরো সংসার। বৃদ্ধা মা স্ত্রী আর চার ছেলেমেয়ের মাঝারি পরিবার। দুই ছেলে বড়, স্বচ্ছল হয়েও বাবার খোঁজ নেয় না। লাখ টাকার উপর ঋণ করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ভাড়ার রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে চলে যাচ্ছিলো দিন। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে গাছের ডাল ভেঙে কোমরে মারাত্মক আঘাত পান, এরপর থেকে আর প্যাডেল চালিত রিকশ চালানোতে জোর পান না, একদিন কষ্টে চালালে ৪-৫ দিন অসুস্থ শুয়ে-বসে থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘নিতান্ত অসহায় এই মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার। আজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি জামিলুর ভাইকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উপহার দেয়া হয়েছে। আশা করি, ছাত্রলীগের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় তার অসহায়ত্ব ক্ষানিকটা হলেও লাঘব হবে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।’
এর আগে কৃষকের ধান কেটে দেয়াসহ নানা মানবিক কাজে সাড়া দেয়ায় ‘মানবিক ছাত্রনেতা’ হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।