স্কুল শিক্ষকদের বেতন বা মাসোহারা হিসেবে নগদ অর্থই দেয়া হয়ে থাকে। দেশ ও স্কুলের মানভেদে এই বেতনের তারতম্য হতেই পারে। তাই বলে পুরোনো প্লাস্টিক হবে শিক্ষকদের বেতন। আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এমন নিয়মই চলছে। দেশটিতে শিক্ষকদের নগদ অর্থের পরিবর্তে পুরোনো প্লাস্টিক বর্জ্য দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানায়, এই অভিনব পদ্ধতিতে বেতন নিচ্ছে নাইজেরিয়ার লাগোসে মরিট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।‘আফ্রিকান ক্লিন আপ ইনিশিয়েটিভ’ ও ‘উইসাইকলারস’ নামের দুটি সংগঠনের সহায়তায় এই পদ্ধতি চালু করেছে স্কুলটি। বেতন হিসেবে অর্থের পরিবর্তে প্লাস্টিক নেওয়ার পেছনে রয়েছে দুটো কারণ। প্রথমত: প্লাস্টিকের মাধ্যমে বেতন দিতে দ্ররিদ্র পরিবারগুলোর খুব সুবিধা হয়। আর দ্বিতীয়ত: স্কুলের আশপাশের এলাকাগুলোকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করা।
যেভাবে দেয়া হয় বেতন
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রথমে ব্যাগভর্তি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে স্কুলের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে জড়ো হন। সেখানে তাদের প্লাস্টিক বর্জ্যের ওজন মাপা হয়। এরপর ওজন অনুসারে ওইসব বর্জ্যের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ওই আর্থিক মূল্য স্কুলের বেতন হিসেবে কেটে রাখা হয়।
মরিট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা বিবিসিকে বলেন, এভাবে সন্তানের বেতন পরিশোধে আগে তার অনেক টানাটানি হতো। অধিকাংশ সময় তার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকত না। তাই মাঝে মাঝে বেতনের অর্ধেক দিয়ে, বাকিটা অন্য সময়ে পরিশোধ করতেন। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য নেওয়ার এই প্রকল্পের কারণে এখন স্কুলের বেতন দেওয়াটা তার জন্য সহজ হয়ে গেছে।
প্লাস্টিক নেওয়ার বিষয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বলেন, এর মধ্য দিয়ে সব অভিভাবক চাপমুক্ত হয়েছেন। তারা এখন সহজেই স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন। ফলে এই প্রকল্পে সবাই লাভবান হয়েছেন। স্কুলের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মা’রও সুবিধা হয়েছে।
অন্যদিকে লাগোসের ‘মাই মডার্ন মেট’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান বলছে, প্লাস্টিক বর্জ্য নেওয়ার এই প্রকল্প শুধু ওই এলাকার পরিবেশ দূষণই রোধ করছে এমন নয়। পাশাপাশি দরিদ্র ছেলেমেয়েদের স্কুলশিক্ষা নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, কেবল নাইজেরিয়ায় নয়, ভারতের কয়েকটি স্কুলেও টিউশন ফি হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য নেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি আসাম রাজ্যের আকসার ফোরাম স্কুলে এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১১০। স্কুলে পড়ার জন্য সপ্তাহে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ২০টি করে প্লাস্টিক আইটেম জমা দিতে হয়। আর এটাই তাদের বেতন।