অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট ঘোষণার সময় বাজেটের একটি অংশে লেখা ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ’ অংশ পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি নিজেই হেসে ফেলেন।
হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমার না। আমি অর্থমন্ত্রীর বাজেট পড়ছি।’ -এ নিয়ে সংসদে হাসির রোল পড়ে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার কিছু সময় পর বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। পরে তার পক্ষে বাজেটের বাকি অংশ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেন। এ বিকাল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট ঘোষণা পাঠ করছিলেন।
এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে খরচের যে হিসাব ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.১ শতাংশের সমান।
এবার সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে। যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।
কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।
তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।
তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। চলতি রাজস্ব বছরের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করেই এমনটা ধরা হয়েছে।।
জানা গেছে, সমাজে বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে বয়স্ক ভাতার সম্প্রসারণ করেছেন তিনি। চলতি অর্থবছরে ৪০ লাখ সুবিধাভোগী ছিলেন এ খাতে। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৪৪ লাখে উন্নীত করার ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা করা হচ্ছে।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৭ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। বরাদ্দ ৮৪০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০ কোটিতে উন্নীত করা হচ্ছে। অন্যদিকে আগামী বাজেটে বেকারদের জন্য প্রথমবারের মতো ‘উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য হলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এ ছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ থাকছে।
এ ছাড়া তৈরি পোশাকপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যেভাবে প্রণোদনা পেয়ে আসছে, আরও কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ ঋণ ব্যবস্থার প্রস্তাব থাকবে।