Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বড় ভাইয়ের বদলে ছোট ভাই গ্রেফতার, অবশেষে মুক্তির নির্দেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০১৯, ০৯:১৭ PM
আপডেট: ১২ জুন ২০১৯, ০৯:১৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


অবশেষে মুক্তি পেলেন বড় ভাইয়ের বদলে গ্রেফতার হয়ে সাজাখাটা ডাব বিক্রেতা ছোট ভাই সজল মিয়া। 

বুধবার (১২ জুন) বিকেলে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মনসুর আলম মামলার দায় থেকে সজল মিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে আসামি না হয়েও কেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হিসেবে সজলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার জবাব দিতে আদালত রাজশাহী মহানগর পুলিশের শাহমখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজকে শোকজ করেছেন বলে জানিয়েছেন সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে সজলের বড় ভাই ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার আগে থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। গত ৩০ এপ্রিল শাহমখদুম থানা পুলিশ সজলকে গ্রেফতার করে। এরপর ফজল হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা জানান, অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেবেন সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপর প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ভুক্তভোগী সজলের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করে আদালতে আবেদন করব।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে এফিডেফিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

এদিকে, বিনাদোষে গ্রেফতার করায় শাহমখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজের শাস্তি দাবি করেছেন সজলের ভাই মো. বাবু।

তিনি বলেন, সজলকে গ্রেফতারের পর আমরা অনেক বুঝিয়েছি। ওসি কোনো কথা শোনেননি। ছেড়ে দেয়ার আশ্বাসে আমাদের সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিলেন থানায়। তারপর সকালে আসতে বলেন। আমরা আবার ভোর ৬টায় থানায় যাই। দুপুর পর্যন্ত বসিয়ে রেখে সজলকে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেড় মাস ধরে আমরা হয়রানির শিকার হলাম। তাই ওসির শাস্তি দাবি করছি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সজলকে যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই পুলিশের গ্রেফতারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো। দুইজন সাক্ষী এ ব্যাপারে এফিডেফিট করে দেয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন।

এরপর মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ দিন আদালত না বসায় পরদিন আবারও শুনানি হলো। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর এ দিন অব্যাহতি পেলেন সজল।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর।

এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তার শারীরিক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আবার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেফতার করেছে।

এ দিন সজলের ছয় ভাই-বোন আদালতে এফিডেফিট করে জানান যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘদিন ধরেই নিখোঁজ রয়েছেন। তারা ফজলের কোনো খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কি না তারা সেটিও জানেন না। আর ফজল হিসেবে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি আসলে সবার ছোট ভাই সজল। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সজলকে দায় হতে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

তবে আদালতের আদেশের পর তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালত থেকে আদেশের অনুলিপি সেখানে পাঠানো হবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কি না। তা না থাকলে সজলকে মুক্তি দেয়া হবে। আদালত থেকে সজল হাসিমুখেই কারাগারে গেছেন। তবে পুলিশ তার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কথা বলতে দেয়নি।

আগের দিন মঙ্গলবার শুনানির জন্য আদালতে আনা হলে হাজতে ঢোকানোর সময় সজল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই দিন তিনি বলেন, কোনো দোষ করিনি। আমি আসামি না। তারপরেও আমি কয়েদি!

সজল বলেন, পুলিশ আমাকে বিনাদোষে জেলে পাঠিয়েছে। জেলে কয়েদি হিসেবে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে হয়। বিনাদোষে এসব সহ্য করতে হচ্ছে।

 

Bootstrap Image Preview