লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় আপিয়া বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধুর শরীরে গরম দুধ ঢেলে ঝলসে দিয়েছেন তার স্বামী মাসুদ রানা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় আগুনে পোড়া গুরুতর আহত গৃহবধুকে হাতীবান্ধা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন প্রতিবেশীরা। এ ঘটনায় ঐ গৃহবধুর দেবর সাজুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আপিয়া বেগম উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবি গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৩ বছর আগে ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের বিনিময়ে একই গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুদ রানার সাথে বিয়ে হয় আপিয়ার। বিয়ের পর কিছু দিন সংসার ভাল ভাবে চললেও পরে যৌতুকের জন্য পুনরায় চাপ দেন জুয়াড়ি স্বামী মাসুদ রানা। সাধ্যমত মেয়ে জামাইয়ের চাহিদা নিবারন করেন আপিয়ার বাবা মা। জুয়ায় টাকা হারিয়ে পুনরায় স্ত্রীক কাছে যৌতুকের দাবি করেন স্বামী মাসুদ। এ অবস্থায় সংসার সচল রাখতে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ নেয় গৃহবধু আপিয়া।
সোমবার (১০ জুন) পুনরায় যৌতুকের টাকা আনতে আপিয়াকে বাবার বাড়ি যেতে বলেন মাসুদ রানা। কিন্তু আপিয়া না যাওয়ায় তার সাথে বাক-বিতন্ডা বাধে স্বামী মাসুদের। মঙ্গলবার দুপুরে সন্তানের জন্য আপিয়া সেমাই রান্না করছিল। এ সময় সেমাই রান্নার গরম দুধ আপিয়ার শরীরে ঢেলে দেয় স্বামী মাসুদ। ফলে আপিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। পরে তার চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আপিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,‘আমার স্বামী টাকার জন্য সব সময় আমাকে মারধর করেন। আমি ইট ভাটায় কাজ করে টাকা আয় করে তাকে দেই। আর সেই টাকা দিয়ে আমার স্বামী জুয়া খেলে। গত সোমবারও আমাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে। আমি টাকা আনতে যাইনি বলে কড়াই ভর্তি গরম সেমাই শরীরে ঢেলে দিয়েছে।’
এবিষয়ে আপিয়ার মা মর্জিনা বেগম বলেন,‘আমরা গরীব মানুষ তবুও যতটুকু পারি জামাই মাসুদকে টাকা দিয়ে সাহায্য করি। বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে কারনে অকারণে মারধর করেন। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
হাতীবান্ধা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.নাঈম হাসান নয়ন জানান, আপিয়ার শরীরের কিছু অংশ ঝলছে গেছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক লালমনি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। গৃহবধুর দেবর সাজুকে ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’