রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনের আসবাবপত্র ও বালিশ কেনা এবং অন্যান্য কাজের অস্বাভাবিক খরচ নিয়ে সমালোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করলেন রাজধানীর পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বালিশ দুর্নীতি নিয়ে একটি ওয়াজ মাহফিলে বিভিন্ন বিষয় তুরে ধরেন তিনি।
গত শুক্রবার (২৪ মে) নিজের ফেসবুক পেজে এ ভিডিও শেয়ার দেন তিনি। যা মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পরে। এছাড়াও তার এ ওয়াজকে প্রশংসা করেছেন হাজার হাজার নেটিজেনরা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যা বলেছেন খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ-
ওয়াজে বালিশ দুর্নীতির বিষয়ে খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, মিডিয়াতে যেভাবে আসছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বালিশের দাম নাকি ৬ হাজার টাকা। যদি ভালো বালিশ হয়। পারমাণবিক বালিশ হয়, যোগ করেন তিনি। তবে এখানে আরেকটি ব্যাপার রয়েছে, ওই বালিশ তুলতে নাকি আমার খবর হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। নিচ থেকে ওপরে ওঠাবে তাতেই ৮০০ টাকা। বিষয়টি কিন্তু হাসির কথা নয় ভায়েরা আমার এটা ভয়ংকর ব্যাপর। এটা কেউ কেউ বলছে পুকুর চুরি। কিন্তু আমি বলছি এটা পুকুর চুরি নয় ভায়েরা আমার এটা সমুদ্র চুরি।
কেন এটা সমুদ্র চুরি তার ব্যাখ্যায় ওয়াজে এই মাওলানা বলেন, বালিশের দাম ও বালিশ তোলার শ্রমিকের খরচও আমরা জানি। তবে এখন কথা হচ্ছে বালিশের দাম আমরা জানি বলেই বুঝতে পারছি কত বড় দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু এই বালিশ ছাড়াও পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে তার নাম, রং, আকৃতি ও দাম কিন্তু আমরা জানি না। তাহলে এসব বিষয়ে কী ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে তা জানা আমাদের সাধ্যের বাইরে। এ জন্য এটার নাম দিয়েছে সমুদ্র চুরি।
পাকসীতে আমরা যাতায়াত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকমীতে আমার প্রচুর যাতায়াত রয়েছে। সেখানে এখন রেস্টুরেন্টের এক কাপ রং চায়ের দামও ৫৫ টাকা দিতে হয়। দাম বেড়েছে কেন? জানতে চাইলে শুনে হয় হুজুর এটা পাকসী মনে করবেন না, এটা এখন মস্কো। রাশিযার সব কর্মচারীরা এখানে কাজ করছে। এখন এই এলাকার ৩০ টাকার রিকসা ভাড়া এখন ৭০ টাকা হয়েছে। কত বড় দুর্নীতি চিন্তা করে দেখেন ভায়েরা আমার।
এসব কেন ঘটছে জানেন ভায়েরা আমরা। তিনি বলেন, ঘটছে এই কারণে যে এখন আমাদের কাছে পাপ আর কোনো সাবজেটই না। কথা ঠিক কিনা বলেন।
বিদেশিরা আমাদের ঋণ দেয়া উল্লেখ তরে তিনি বলেন, বিদেশিরা আমরাদের ঋণ দেয়। কিন্তু ওই ঋণের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেয়। ঋণ দিলে আমাদের কাজ থেকে এত টাকার জিনিসপত্র কিনতে হবে। যদি না মিলে তবে ব্যালেন্স করতে হবে। একটি মেসের দাম যদি ৯ টাকা হয় , তবে যদি ব্যালেন্স করতে যদি ৯০০ টাকা বাকি থাকে তবে মেসের দাম ৯০৯ টাকা ধরে ব্যালেন্স করতে হয়। রক্ত চোষা কাজ চলতেছে।
তিনি বলেন, এসবের মুল কারণ কী? এসবের মূল কারণ হচ্ছে পাপ আর আমাদের কাছে কোনো গোনার বিষয় নয়। আল্লাহর কাছে দাঁড়াতে হবে, হিসেব দিতে হবে এটা আমাদের অনুভূতির মধ্যেই নেই। এত দুর্নীতিগ্রস্ত আমরা হয়ে গেছি প্রিয় বন্ধুরা আমরা। এ জন্য বালিশের দামও ঠিক আছে সবই ঠিক। দেখাতে এত ঠিক না দেখতে না জানি কী হচ্ছে আল্লাহ ভালো জানে।
আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর পরিচয়
রাজধানীর পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপারেটিভ রিলিজিয়াস বিষয়ে পিএইচডি করছেন। এছাড়াও তিনি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা ইবিএসের রিলিজিসিয়াস এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর।
পারিবারিক জীবনে তিনি দুই মেয়ের জনক। বড় মেয়ে নার্সারিতে পড়ে আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ৮ মাস। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ শহরে উকিলপাড়া। বাবা নওগাঁ আলিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস ও নওগাঁ কাঁচারি মসজিদের খতিব।
মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহদের সাত ভাইবোন। পাঁচ ভাই ও দুই বোন। এর মধ্যে দুই ভাই ঢাকা মেডিকেলের ডা. নূরুল্লাহ ও ডা. নিয়ামতউল্লাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন।
এদিকে রূপপুর প্রকল্পের এসব দুর্নীতি বিষয়ে তদন্ত করার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদফতর থেকে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পৃথক এ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সব প্রকার বিল বন্ধ রাখার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতর নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
প্যাকেজের প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কালন করায় অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ দেয় গণপূর্ত অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
আলোচ্য কাজের বিপরীতে এখনও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।