Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

খালি পেটে লিচু খেলে ঘটতে পারে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৯, ০৪:০০ PM
আপডেট: ২৫ মে ২০১৯, ০৫:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


২০১৫ সালের ২৯ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১১ শিশু। ওদের বয়স ছিল দেড় থেকে ছয় বছর। এই ঘটনার আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি ফল খেয়ে আরো অনেক শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য ভারতে ১৯৯৫ সাল থেকে এভাবে শিশু মৃত্যুর খবর আসছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষকরা এতোদিন কারণ হিসেবে লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিকের কথা বলে আসছিলেন। তবে সমপ্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে খালি পেটে লিচু খেলেই শিশুদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।

ভারতের বিহারে দুই বছর আগে মৌসুমি ফল লিচু খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩৯০ জন শিশু। এদের মধ্যে ১২২ জনই মারা গিয়েছিল। গবেষকরা এখন বলছেন, খালি পেটে লিচু খাওয়ার কারণেই তাদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।

লিচু মৌসুমি ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ভারত ও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি। আন্তর্জাতিক চিকিত্সা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানচেট’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।

খালি পেটে অনেকগুলি লিচু খেয়ে ফেললে শরীরে যে বিষ তৈরি হয়, তার ফলেই সুস্থ-সবল শিশুদের হঠাৎ খিঁচুনি আর বমি শুরু হয়। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারা। আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।

ভারতের বিহারে ‘লিচু রোগ’ বা বাংলাদেশের কোথাও কোথাও অজানা কীটনাশকের প্রয়োগকেই এসব শিশু মৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হতো এতদিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, মৃত্যুর কারণটা লুকিয়ে থেকেছে ‘লিচু’ ফলের মধ্যেই।

লিচুতে ‘হাইপোগ্লাইসিন’ নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভারতের বিহারের ঘটনায় বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি শিশুর চিকিত্সা সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, ওই বাচ্চাগুলি আগের রাতে খাবার খায়নি অথবা কম খেয়েছিল। পরের দিন রাস্তায় পরে থাকা, নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা অপরিপক্ব লিচু একসঙ্গে অনেকগুলি খেয়ে ফেলেছিল তারা। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাগুলি।

মে থেকে জুলাই মাসেই লিচুর ফলন হয়ে থাকে। আর ওই সময়েই শিশুরা ওই উপসর্গ নিয়ে মারাও যায় সব থেকে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু বা লিচু জাতীয় ফল খেয়েই যে বিষক্রিয়ায় বহু শিশু মারা যায়, সেটা অনেক দিন আগেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গবেষণায় জানা গিয়েছিল। এরপর ‘জামাইকান ভমিটিং সিকনেস’ নামের ওই রোগটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়েছে বলছে ‘ল্যানচেট’।

কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, অজানা কীটনাশকের কারণে এটা হয় বলে আমরা এতোদিন ধারণা করে আসছিলাম। তবে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ও সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রুহুল আমীন বলেন, লিচুতে থাকা ‘হাইপোগ্লাইসিন’ শরীরের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। ওইসব শিশুরা খালি পেটে লিচু খেয়েছিল। খালি পেটে থাকলে এমনিতেই শরীরে গ্লুকোজ কম থাকে। তাই এই অবস্থায় লিচু খেলে মৃত্যু অবধারিত।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, এতোদিন কীটনাশকের কারণে লিচু খেয়ে শিশুদের মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হতো। তবে নতুন বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে উচ্চতর গবেষণা করতে হবে।

Bootstrap Image Preview