Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঈদকে সামনে রেখে কর্মচঞ্চল তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুর

ফারুক হাসান কাহার, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০১৯, ০৮:১৬ PM
আপডেট: ২৩ মে ২০১৯, ০৮:১৬ PM

bdmorning Image Preview


ঈদকে সামনে রেখে দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর তাঁতপল্লী সরগরম হয়ে উঠেছে। তাঁতী-শ্রমিকদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য আর ব্যতিব্যস্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে তাদের কর্মব্যস্ততা আর খটখট শব্দে মুখরিত ও প্রাঞ্জলিত হয়ে উঠেছে তাঁতসমৃদ্ধ এ জনপদ। তাঁতী ও শ্রমিকরা বাড়তি আয়ের জন্য হস্তচালিত ও বৈদ্যুতিক স্বয়ংক্রিয় তাঁতে তাঁতবস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন।

দেশে তাঁতে উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার চাহিদার সিংহভাগ তাঁতবস্ত্রই উৎপাদিত হয় শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায়। এখানে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার কদর রয়েছে গোটা দেশে ও বিদেশে।

সারা বছরের এ সময়ে দেশীয় তাঁতবস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁতী ও শ্রমিকরা বাড়তি একটু আয়ের জন্য কোমড় বেঁধে কাজ করে চলেছেন।

তাঁতীরা জানান,  প্রতি বছরের এই সময় দেশে ও দেশের বাইরে শাহজাদপুরের তাঁতে তৈরী শাড়ি, লুঙ্গির ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়।

সরেজমিনে ঘুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসদরের রূপপুর, মণিরামপুর, পুকুড়পার, তালতলা, আইকবাড়ী পাড়কোলা, পৌরসদরের বাইরে চরকাদাই, পোতাজিয়া ,হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের রতন কান্দি, বাদলবাড়ী, ডায়া, হামলাকোলা,  পোরজনা, পুঠিয়া, উল্টাডাব, জামিরতা, জগতলা, কৈজুরী, খুকনী, জালালপুর, বেলতৈল, রুপবাটি ও গালা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সচল তাঁত কারখানায় পুরোদমে তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের কাজ চলছে। স্থানীয় তাঁতীরা তাঁতবস্ত্র উৎপাদন করতে গিয়ে সারা বছরে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন।

এ মৌসুমে তারা তাদের উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র বিক্রি করে সারা বছরের ঋণের অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। এ জন্য এ সময় তারা অতি ব্যতিব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।

তাঁতীরা জানান, রোজার ঈদকে সামনে রেখে শাহজাদপুর উপজেলার তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত প্রায় আড়াই লাখ তাঁতী, শ্রমিক নারী-পুরুষ দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শাহজাদপুর উপজেলায় উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি লুঙ্গি দেশের মোট চাহিদার ৪০ ভাগ পূরণ করে আসছে।

এ চাহিদা পূরণে শাহজাদপুর উপজেলার পৌরএলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রামে ছোট বড় অসংখ্য তাঁত কারখানা রয়েছে। তাঁতের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিকের মতো। এরমধ্যে পিটলুম, হ্যান্ডলুম, পাওয়ারলুম রয়েছে। এসব তাঁত কারখানায় সম্পৃক্ত থেকে প্রায় আড়াই লাখ তাঁতী ও শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক সরাসরি তাঁত বুনোনের কাজে নিয়োজিত। বাকিরা সূতা রঙ, জ্যাকেট ডিজাইন তৈরী, সূতা পারি, চরকা কাটা, সানা বও তৈরী, কাপড় ভাঁজ করা, কাপড় লেভেলিং করা , হাটবাজারে কাপড় পৌঁছে দেয়া, কাপড় বিক্রিসহ নানা কাজ করে থাকেন।

তাঁতের শাড়ি লুঙ্গির সূতা ডাইং প্রসেসিং করার জন্য ২০টির মতো ছোট-বড় ডাইং প্রোসেসিং মিল ও অর্ধশত সূতা রঙ করার কারখানা রয়েছে। তাঁতের সূতার চাহিদা পূরণের জন্য শাহজাদপুরের হাট বাজারে প্রায় ২ শতাধিক পাইকারী ও খুচরা সূতার দোকান রয়েছে।

এছাড়া তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা বিক্রির জন্য শাহজাদপুরে দেড় শতাধিক কাপড়ের আড়ৎ ও প্রায় দশ হাজার তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রির পাইকারী, খুচরা দোকান ও শো-রুম রয়েছে।

তাঁতীরা জানিয়েছে, বাজারে সূতা, রঙসহ অন্যান্য কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তাঁত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। এমনকি তাঁতে তৈরি শাড়ি লুঙ্গির দামও বৃদ্ধি পায়নি। তাই স্বল্প আয় আর অল্প মজুরি বাড়াতে তাদের বেশি বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview