‘আমার অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াতে এখন একটি মানুষই আছেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের মমতাময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মা চাইলে আমার এতিম সন্তান তার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা ছোট চাকরি পেতেন। মায়ের কাছে যাওয়ার কোন যোগ্যতা নেই আমার। যদি যেতে পারতাম মায়ের পা ধরে আমার সন্তানের জন্য একটা চাকরি ভিক্ষা চাইতাম।‘
‘শুনেছি এবং পত্রিকা টিভিতে দেখেছি মা কত মানুষকে তিন বেলা দু’মুঠো ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি মায়ের সুনজর শুরু থেকেই। এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদকের কাছে মৃত্যু বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। তার আশা হয়ত এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মায়ের নজরে আসবেন।‘
মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ রেলওয়েতের চাকরির ভাতা সম্পর্কে জানতে চাইলে হোসনেয়ারা বেগম এভাবেই তার কথাগুলো বলেন।
হোসনেয়ারা বেগম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও রেলওয়ে চাকরির ভাতা থেকে আমি বঞ্চিত। কারণ আমি আমার স্বামীর ২য় পরিবার ছিলাম। বড় পরিবারের সব ছেলে-মেয়েরা স্বয়ংসম্পন্ন থাকার পরও তারা আমাকে আমার এক অবিবাহিত মেয়ে ও ছেলেকে বাবার সবকিছু থেকে দূরে রেখেছে। মাত্র পাঁচ বছর থেকে একজন নারী পুলিশের সহযোগিতায় ভাতার কিছু টাকা পাচ্ছি।
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট গ্রামে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে জীবন-যাপন করছে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক আলী ঝাপিয়ে পরেন দেশকে বাঁচাতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে। দেশকে স্বাধীন ও করেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক আলী। হয়তো ভেবেছিলেন তার মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তান মেহেদী হাসান পাবেন বাবার ছোট চাকরিটা। বাবার মৃত্যুর পর পৌষ্য কোটা বা মুক্তিযোদ্ধা কোটা কোনটিই পারেননি এই দরিদ্র পরিবারেব মুখে হাসি ফুটাতে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়েতে কোন কোন সময় বাবার মৃত্যুর পর ঐ চাকরিটা সন্তান ফিরে পেয়েছে- এমন নজির নতুন নয়।
এদিকে, হোসনেয়ারা বেগম মানবেতর জীবনযাবন করছে স্বামী বীরমুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক আলীর মৃত্যুর পর থেকে সন্তান মেহেদী হাসান ও মেয়েকে নিয়ে।
জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক আলী ছিলেন শেড খালাসী টি/নং-৩২ হিসাবে এস এস আই/টি এক্সআর আইসি/খুলনা। এর অধীনে কর্মরত অবস্থায় ০১-০৮-১৯৯৮ইং সালে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকেই অবিবাহিত কন্যা সন্তান ও ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে মানবেতর অবস্থায় জীবন পার করছেন। নানা কষ্টের মাঝেও কোথাও কোন সহযোগিতা পাইনি স্বামীর পরিচয় দিয়ে। সব মহলের দারে দারে ঘুরেও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেহেদী হাসান এর জন্য ছোট পদে চাকরি ও জোটেনি কাপালে।
পোষ্য কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় একটি চাকরি ভিক্ষা চেয়েও সকল অধিদফতরের দারে দারে গিয়ে কোন সুফল পায়নি এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সন্তানের যোগ্যতা অনুযায়ী বাংলাদেশে রেলওয়েতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির জন্য বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয় এর কাছে আবেদন করেও মিলেনি একটি কাঙ্ক্ষিত চাকরি। রেল মন্ত্রণালয়, এমপি, মন্ত্রীদের সুপারিশের পর ও হতাশা ছাড়া কিছুই জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার পরিবারে।
কিন্তু তার পিতা রেলওয়ে কর্মচারী হওয়ার সুবাদে বুক ভরা আশা নিয়ে বারবার আবেদন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে খালাসী পদে। সব দফতর থেকে মৌখীক ও লিখিত আশ্বাসই ছিল শেষ সম্ভব। এতো কিছুর পরও মেলেনি কাঙ্খিত চাকরি। প্রশ্ন থেকে যায় এতো সুপারিশ থাকার পরও কেন মিলছে না ছোট এই চাকরি? তাহলে কী ঘুষের টাকার কাছে মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সরকারও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি অসহায়?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা সংসৃষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের একটু সুদৃষ্টি পেলে হয়ত। বাংলাদেশ রেলওয়েতে বাবার পৌষ্য কোটা বা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পেতে পারেন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর যে কোনো একটি চাকরি। আর এই একটি চাকরি হয়ত পারেন অবিবাহিত বোনকে একটি সুখের সংসারের ঠিকানা দিতে। পারেন বিধবা বৃদ্ধ মাকে মৃত্যুর আগে কিছুটা সুখ শান্তি দিতে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবাবের বিশ্বাস- এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুনজর কাড়তে পারবে।