Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজমিস্ত্রি সেজে যেভাবে খুনি ধরলেন এসআই

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯, ০৪:৫২ PM
আপডেট: ২১ মে ২০১৯, ০৪:৫২ PM

bdmorning Image Preview


পরনে লুঙ্গি, শরীরে গেঞ্জি; পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল। কাঁধে রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত বেলচা। তবে আপাততদৃষ্টিতে তাকে রাজমিস্ত্রি মনে হলেও তিনি কিন্তু পুলিশের একজন কর্মকর্তা। এক হত্যা মামলার আসামিকে ধরার জন্য তিনি এমনই বেশ ধারণ করেন।

গত ১৪ মার্চ রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার ধনিয়ায় একটি ভাড়া বাসার নিচ তলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শারমিন আক্তার নামের এক নারীকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যায় তার ঘাতক স্বামী মাসুদ হাওলাদার। এ সংক্রান্তে শারমিনের ভাই বাদী হয়ে কদমতলী থানায় পরদিন একটি হত্যা মামলা করেন।

হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর মামলাটির তদন্ত ভার দেয়া হয় কদমতলী থানার এসআই মো. লালবুর রহমান পিপিএম এর উপর। মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন তিনি।

তদন্তকালে জানতে পারেন- ভিকটিম শারমিনের স্বামী মাসুদ পুরাতন প্যান্ট-শার্টের ব্যবসা করত। এ ব্যবসার জন্য সে শনিরআঁখড়া দোকানের পজিশনও নিয়েছিল। ব্যবসা শুরু করার আগেই সে নিজ স্ত্রীকে হত্যা করায়, দোকানের পজিশনের টাকা ফেরত নিতে দোকানের মালিকের পক্ষের লোকের সাথে যোগাযোগ করে। দোকানের অগ্রিম টাকা ফেরত নিতে ডেমরা থানাধীন মিন্টু চত্বর এলাকায় আসে মাসুদ। ইতোপূর্বে এসআই লালবুর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দোকান মালিক পক্ষের লোকের সাথে যোগাযোগ করে হত্যাকাণ্ডের বিষয় তাদের জানিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে বলেন।

সেই অনুযায়ী গত ১৯ মে বেলা ২টার দিকে মাসুদ তার দোকানের এ্যাডভান্সের টাকা নিতে মিন্টু চত্বরে আসতে চাইলে মালিকপক্ষের ওই ব্যক্তি এসআই লালবুরকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পাওয়া মাত্রই মামলার আইও এসআই লালবুর ও এএসআই মো. জসিম ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুঁটে যায়। এর আগে দোকানের মালিক পক্ষের লোক এসআই লালবুরকে জানায়- মাসুদ অনেক চতুর লোক। সে তার আশপাশে কোন ভালো পোশাক ও চালচলনের কাউকে দেখলে দ্রুত ছটকে পড়ে। এই কথাটি মাথায় রেখে এসআই লালবুর ছদ্মবেশ ধরার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তানুযায়ী রাজমিস্ত্রির পোশাকে মিন্টু চত্বর এলাকায় অবস্থান করতে থাকেন এবং দোকান মালিক পক্ষের লোকের উপর নজর রাখেন এসআই লালবুর ও এএসআই জসিম।

অপেক্ষার এক পর্যায়ে চলে আসে সেই মোক্ষম সময়। এসআই লালবুর দেখে দূর থেকে একটি লোক মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় দোকান মালিকপক্ষের লোককে সালাম দিচ্ছে। ঘটনাক্রমে হত্যাকারী মাসুদ এসআই লালবুর ও এএসআই জসিমের পাশেই অবস্থান করছিল। কোন কালক্ষেপণ না করে মাসুদকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরেন এসআই লালবুর। হঠাৎ জনসম্মুখে এমন ঝাপটে ধরার কারণ স্থানীয় লোকজন জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দিয়ে এসআই লালবুর বলেন, যাকে ধরা হয়েছে সে হত্যা মামলার আসামি। তাৎক্ষণাৎ পুলিশের এমন কাজের জন্য স্থানীয়দের প্রসংশায় প্রশংসিত হন কদমতলী থানা পুলিশের এই চৌকস অফিসার।

হত্যার সময়ের চেহারা সাথে গ্রেফতারকালীন চেহারার তারতাম্য থাকার কারণ জানতে মাসুদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তার চেহারা ছিল অনেক ফর্সা এবং দাড়ি-গোফহীন। নিজেকে গোপন রাখতে তিনি তার চেহারায় পরিবর্তন এনেছেন। চেহারা পরিবর্তন করতে তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় রোদে থাকতেন, যাতে করে ফর্সা রং কালোতে পরিণত হয়। সেই সাথে মুখে রেখেছিলেন বড় দাড়ি-গোফ, যাতে করে পুলিশ বা অন্য কেউ তাকে চিনতে না পারে।

এদিকে, গ্রেফতারকৃত মাসুদ হাওলাদার গতকাল সোমবার আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। সূত্র: ডিএমপি নিউজ

Bootstrap Image Preview