Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জসহ বন্দরে পড়ে আছে ৩৩১ বিলাসবহুল গাড়ি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯, ০১:০৬ PM
আপডেট: ২১ মে ২০১৯, ০১:০৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, লেক্সাস, ফোর্ড কার, জাগুয়ার, ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ল্যান্ড রোভার গাড়ি নিয়ে চলছে কাস্টমস বিভাগের নিলাম নিলাম খেলা। দুই দফায় এ ধরনের গাড়ি নিলামে তোলার পরও বিক্রয় হচ্ছে না গাড়িগুলো। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মধ্যে পড়ে আছে পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে। ফলে বিলাসবহুল এই ৩৩১টি গাড়ি নিয়ে এখন বিপাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি, ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি, ২০১৮ সালের ৩০ মে ১১১টি এবং সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল ২২টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলা হয়। জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তৈরি এসব গাড়ির বাজার মূল্যের ৬০ শতাংশ দর না পাওয়ায় প্রত্যেকটি নিলাম বাতিল করতে হয়েছে। একাধিকবার নিলাম আহ্বান করেও গাড়িগুলো বিক্রি করতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। 

২০১১ সাল থেকে গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে। এতে দিন দিন এগুলোর মূল্য কমছে। অকশন ইয়ার্ড খালি করতে গাড়ি বিক্রি জরুরি হলেও প্রত্যাশিত দর না পেয়ে বারবার গাড়ির বিক্রি বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছে। এভাবে কয়েক বছর চলতে থাকলে গাড়িগুলো ধ্বংস করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত গাড়ির মডেল পরিবর্তন হচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রাংশ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়ি পড়ে থাকলেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করা অসম্ভব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছে, কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করে আনা চড়া দামের গাড়িগুলোর নিলাম বাতিল করতে হচ্ছে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায়। সর্বশেষ নিলাম বাতিল করা ২২ গাড়ির মধ্যে মার্সিডিস বেঞ্জ ব্র্যান্ডের মতো গাড়ির দর ওঠে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা। আর লেক্সাস জিপের দর ওঠে মাত্র ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নিলামে অংশগ্রহণকারীরা সিন্ডিকেট করে দামি সব গাড়ির দর কম দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া ভ-ুল করতে চায়।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী নিলামে গাড়ি বিক্রির সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ দাম হাঁকাননি নিলামে অংশগ্রহণকারীরা। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয়বার নিলামে তুলতে হবে এসব গাড়ি। ২২ গাড়ির মধ্যে আবার ৪টির কোনো দরই দেয়নি কেউ। নিলামে তোলা গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম উঠেছে জার্মানির তৈরি মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির। ‘২৪ আওয়ার ঢাকা মেডিক্যাল কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় গাড়িটি কেনার আগ্রহ দেখায়। লেক্সাস ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি কিনতে মাত্র ২ লাখ ৮ হাজার টাকা দর দেন ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা আদিল মোহাম্মদ হাশেম।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার আকবর হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে গাড়ি বিক্রির সুযোগ নেই। প্রথম নিলামে সংরক্ষিত দামের ৬০ শতাংশ না উঠলে নিলাম বাতিল করতে হয়। এখন শিগগিরই দ্বিতীয় নিলামে যাব। নিলামকারীরা যাতে গাড়ি কিনে ভোগান্তিতে না পড়ে সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পারমিটের (সিপি) জন্য চিঠি লিখেছি। কারণ পাঁচ বছরের পুরনো বিলাসবহুল গাড়ির খালাস নিতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিপি নিতে হয়। আগে সিপি নেওয়ার ঝামেলার কারণে অনেকেই নিলামে অংশ নিতেন না।

কাস্টমসের নিলাম শাখার এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশের বেশি দাম না পড়ায় গত তিন বারের মতো এবারও প্রথম নিলামটি বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় নিলামে যদি প্রথমবারের চেয়ে বেশি দর পড়ে, তখন বিক্রির সুযোগ থাকে। সর্বশেষ তৃতীয় নিলামে যে কোনো দামে গাড়ি বিক্রি করতে পারবে কাস্টমস।

জানা গেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে কার্নেট বা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেগুলো ফিরিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে যারা শুল্কমুক্ত এ সুবিধা ব্যবহার করে গাড়িগুলো এনেছেন তাদের বেশিরভাগই প্রবাসী বাংলাদেশি, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই এসব গাড়ি কার্নেট সুবিধায় এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ আছে। তাই এসব গাড়ি আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় এক সময় আমদানিকারকরা গাড়িগুলো খালাস নেননি।

গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখায় নিলামে অংশগ্রহণকারীদের (বিডার) সামনে দরপত্রের বাক্স খোলা হয়। এতে চট্টগ্রামে ২৭টি দরপত্র পড়েছে। অপরদিকে ঢাকার এনবিআরসহ ৮ স্থানে বসানো বাক্সে দরপত্র পড়ে ৪টি। এ ছাড়া সিলেট, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং বরিশালে স্থাপিত বাক্সে কোনো দরপত্র পড়েনি।

Bootstrap Image Preview