Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের পাঁচজন বহিষ্কার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯, ১০:০২ AM
আপডেট: ২১ মে ২০১৯, ১০:০২ AM

bdmorning Image Preview


ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিতর্ক যেন থামছে না। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পদবঞ্চিতরা আন্দোলন থেকে সরে এলেও ফের শুরু হল নতুন বিতর্ক। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে নিজেদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় একজনকে স্থায়ী ও চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

আজ সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারীদের হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে পাঁচজনকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। অন্য দু’জনকে কেন বহিষ্কার করা হবে না- তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

বহিষ্কৃতদের একজন ও কারণ দর্শাতে বলা অন্য একজন সেদিনের হামলায় আহত হয়েছিলেন। তাই পদবঞ্চিতরা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

হামলার ঘটনায় জড়িত মূল হোতাদের শাস্তি দাবি ও হামলার শিকার নেত্রীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ চার নেতার কাছে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

সোমবার ছাত্রলীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের কর্মী সালমান সাদিককে। এর আগেও সংগঠন থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করেই নতুনভাবে তাকে বহিষ্কার করা হল। সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, জিয়া হল ছাত্রলীগের সদস্য কাজী সিয়াম ও জিয়া হল ছাত্রলীগের কর্মী সাজ্জাদুল কবীর।

কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার ও জিয়া হল ছাত্রলীগের পরিকল্পনা ও কর্মসূচিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান শান্তকে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

ছাত্রলীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ মে মধুর ক্যান্টিনের ঘটনার তদন্তের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে জেরিন দিয়া ঐদিন পদবঞ্চিতদের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলেন।

মারধরে সেদিন তিনিও আহত হয়েছিলেন। এই নেত্রী ফেসবুকে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগও এনেছিলেন। এছাড়া রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছিলেন।

প্রতিক্রিয়া জানতে জারিন দিয়াকে মুঠোফোনে পাওয়া না গেলেও লিপি আক্তার যুগান্তরকে বলেন, সেদিন আমরা আহত হয়েছি, আর উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হল। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অনভিপ্রেত।

এ বিষয়ে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাদের নেতৃত্বে থাকা সর্বশেষ কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কথায় যখন আমরা আন্দোলন থেকে সরে এলাম তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের মর্মাহত করেছে।

আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি। সেদিনের হামলার ঘটনার মূল হোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং আমাদের যেসব বোন আহত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনোভাবেই এ ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত আমরা মানব না।

এর আগে নানা নাটকীয়তার পর আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর রোববার রাত ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন।’ রোববার রাতের বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে পদবঞ্চিতরা যেসব আশ্বাস পাওয়ার দাবি করছেন সেগুলো হল- খুব দ্রুত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পদবঞ্চিত নেতাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা, গত ১৩ মে পদবঞ্চিতদের ওপর মধুর ক্যান্টিনে হামলা এবং শনিবার মধ্যরাতে টিএসসিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কারা, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিতর্কিতদের পদগুলোকে শূন্য ঘোষণা করে যোগ্যতার ভিত্তিতে ওইসব পদে পদবঞ্চিতদের দিয়ে পূরণ করা হবে।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা আমাদের ডেকেছিলেন। সব দাবি তারা মেনে নিয়েছেন।

হামলার ঘটনার বিচার ও বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ওইসব শূন্য পদে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে বঞ্চিতদের স্থান করে দেয়া হবে। অকাট্য প্রমাণসহ বিতর্কিতদের একটি তালিকা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে দেয়ার কথাও জানান তিনি।

রোববার রাতে আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে দেখা করতে যায় পদবঞ্চিতদের ১১ জনের একটি প্রতিনিধি দল। আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক।

তারাই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সার্বিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

অন্যদিকে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন- সর্বশেষ কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, অর্থ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা সিকদার, দফতর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক নেতা এবং পাঁচজন হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও পদবঞ্চিতদের প্রতিনিধিরা রাত পৌনে ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছুটে যান। তাদের সঙ্গে সেখানে যান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারও।

ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন পদবঞ্চিতদের উদ্দেশে বলেন, ‘পদের লোভ না করে দল ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ছাত্রলীগ কোনো স্থায়ী জিনিস না, একটা চলমান প্রক্রিয়া। ছাত্রলীগ করতে না পারলে যুবলীগ বা আওয়ামী লীগ করবেন। রাজনীতির একটা চর্চা থাকতে হবে। এভাবে কিন্তু রাজনীতির চর্চা হয় না। কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ছাত্রলীগের সুনাম যেন আমরা নষ্ট না করি। কাল থেকে একসঙ্গে পথ চলে আসুন দু’একদিনের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবি।’

শোভন বলেন, ‘বিতর্কিত ১৭টি পদ আপাতত শূন্য হওয়ার পথে। ছাত্রলীগের কর্মী হলে ত্যাগ করতে শিখতে হবে।’ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) প্রথমত আমাদের সবাইকে এক ছাতার নিচে দেখতে চান। আপা দ্বিধাবিভক্ত কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। আপা বলেছেন, আগে একই টেবিলে বসে দেখান ছাত্রলীগ একটা পরিবার, আমরা ঐক্যবদ্ধ একটা পরিবার ধারণ করছি, তারপর তিনি আমাদের সব কথা শুনবেন। কিছুদিন আগে আপার চোখের অপারেশন হয়েছে। আপা একটু বেটার ফিল করলে সবার সঙ্গে কথা বলবেন।’

গত ১৩ মে ঘোষিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা অর্ধশত নেতা বাদ পড়েন। কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়।

Bootstrap Image Preview