নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়াস্থ সরকারি খাদ্য গুদামে চলতি মৌসুমের চাল, গম ও বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা হলেও চাল ছাড়া অন্য কিছু ক্রয় করা হচ্ছে না। মিল থেকে প্রতিদিন ৬/৭ ট্রাক বোঝাই চাল খাদ্য গুদামে আসছে ও তা ক্রয় করে গুদামজাত করা হলেও ‘জায়গা নাই’ অজুহাতে কর্তৃপক্ষ কৃষক থেকে সরাসরি ধান ও গম কিনতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
গত ১২ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস প্রধান অতিথি হিসেবে ওই খাদ্য গুদামের অভ্যন্তরীণ চাল, গম ও বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এবার ৩৬ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন চাল, ২৮ টাকা কেজি দরে ৫৫৫ মেট্রিক টন গম, ও ২৬ টাকা কেজি দরে ২০৫ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলার নগর দ্বারিখৈড় গ্রামের কৃষক আলী হোসেন জানান, বাজারে ধানের দর মণ প্রতি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। যা বিক্রি করতে এসে যখন ব্যাপারীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করি তখন চাপা কষ্টে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। এতো পরিশ্রম করেও লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। বাকীতে সার, ঔষধ নিয়েছিলাম, টাকা সুদে ধার করে কামলা নিয়ে ধান কেটেছিলাম। ধান বিক্রির এই টাকা থেকে তা পরিশোধ করলে বাড়িতে আশায় থাকা স্ত্রী-সন্তানের জন্য বাজার থেকে কী নিয়ে যাবো।
বনপাড়া বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা একাধিক কৃষক বলেন, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করাটা আমাদের জন্য স্বপ্ন দেখা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। কেননা ওখানে ক্ষমতাসীন নেতারাই কৃষক সেজে ধান বিক্রি করবে। বাজার থেকে ৫০০-৬০০ টাকায় ধান কিনে তা ওই গুদামে ১০৪০ টাকা দরে বিক্রি করবে।
সোমবার (২০ মে) সকালে সরেজমিনে খাদ্য গুদামে গেলে দেখা যায়, গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন ট্রাক থেকে চাল নামাতে ব্যস্ত। ধান কবে থেকে কিনবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুদামে জায়গা না থাকলে ধান কিনবো কী করে।
সাংবাদিকরা এ সময় বলেন, চালতো কেনা হচ্ছে মিল থেকে, সেখান থেকে পরেও গুদামে আনা যাবে। এখন কৃষকের দুঃসময় যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে চাল ও গম নিলে তাদের উপকার হবে। সামনে ঈদ, এক্ষেত্রে পরিবার নিয়ে তারা ঈদটা ভালোভাবে......। এ কথা শেষ না হতেই ওই কর্মকর্তা কাজের অজুহাতে গুদামের ভিতর দ্রুত ঢুকে পড়েন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, সামনে ঈদ। এসময় বাংলাদেশের প্রাণ কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত উপযুক্ত এই দামে ধান ও গম কিনলে তাদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটতো। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ২০৫ টন ধান ও ৫৫৫ মেট্রিক টন গম প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হলে কর্তৃপক্ষের মানবিক পরিচয় ফুটে উঠতো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনোয়ার পারভেজ জানান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও গম ক্রয় শুরু করার জন্য। প্রকৃত কৃষক ছাড়া ধান বা গম কিনলে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন তিনি।