ভেজাল প্রমাণিত হওয়ায় বাজার থেকে ৫২ টি পন্য তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও বেশ কিছু এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে সেভাবে দেখা না মিললেও বিভাগীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের দোকানে দোকানে এসব পণ্য এখনো পাওয়া যাচ্ছে। যদিও দোকানিরা দাবি করেছেন, তারা এসব পণ্য ফেরত দিতে রেখে দিয়েছেন। নতুন করে অর্ডার নিচ্ছেন না, বিক্রিও করছেন না।
গত ১২ মে হাইকোর্ট বাজার থেকে যেসব পণ্য সরাতে বলেছে তার মধ্যে সরিষার তেল, লবণ, লাচ্ছা সেমাই, ঘিসহ মশলা রয়েছে। যেসব পণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে তীর, পুষ্টি ও রূপচাঁদা সরিষার তেল। ওষুধের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় নামা এসিআইর লবণ ও ধনিয়ার গুঁড়ায় মিলেছে ভেজাল। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী বাজার দখল করা প্রাণ কোম্পানির হলুদের গুঁড়া, কারি মশলা ও লাচ্ছা সেমাইও গুণগত মানে উত্তীর্ণ নয়।
ভেজালের তালিকায় আরো আছে ড্যানিস ফুড কোম্পানির কারি মশলা, ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের লাচ্ছা সেমাই, মোল্লা সল্ট লবণ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল ঘি, সান চিপসের নাম। ডানকানের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের পানিও পানের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
হাইকোর্টের আদেশের পর মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পণ্য তুলে নিতে নির্দেশ দেয়। এই সময়সীমা পার হয়ে গেছে এরই মধ্যে। ঢাকার বাজারে বড় বড় দোকানে সেভাবে আর এগুলোর দেখা মিলছে না। কিন্তু পাড়া-মহল্লার বা ঢাকার আশে পাশের এলাকার বিভিন্ন দোকানে এখনো মিলছে কিছু কিছু পণ্য।
নিষিদ্ধ পণ্য এখনো বাজারে কীভাবে আছে- জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম ইমদাদুল হক বলেন, ‘হাইকোর্টের নিষিদ্ধ ৫২টি পণ্য যাতে বাজারে বিক্রি করা না হয় সে বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে কাজ করছে। কাউকেই নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।’
রাজশাহীর ব্যুরোপ্রধান রিমন রহমান গতকাল নগরীর সাহেব বাজার, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট কাঁচা বাজারে ৫২টি পণ্যের মধ্যে বেশ কিছু খুঁজে পেয়েছেন।
সাহেববাজারের এক নম্বর গদি ঘরে ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, প্রাণের হলুদের গুঁড়া ও বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের রূপচাঁদা সরিষার তেল সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ বিষয়ে দোকান মালিক মোশাররফ হোসেন আকন্দ বলেন, ‘৫২টি পণ্য আদালত বাতিল করছেন, তা আমরা শুনেছি। কিন্তু পণ্যগুলো কোম্পানি নিয়ে যাবে নাকি আমাদেরই ফেলে দিতে হবে সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোন নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’
বিএসটিআই রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খাইরুল ইসলাম বলেন, আদালতের নিষিদ্ধ ঘোষিত ৫২টি পণ্যের বিক্রি বন্ধের জন্য তারা বাজারে বাজারে বলে এসেছেন। কেউ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
খুলনায় ঢাকা টাইমসের সহকর্মী সোহাগ দেওয়ান জানান, উচ্চ আদালত থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেওয়া পণ্যগুলো ব্যবসায়ীরা কোম্পানিগুলোকে ফেরত দিচ্ছেন। তবে এখনো দোকানে দোকানে রয়ে গেছে নানা পণ্য। যেসব কোম্পানি এখনো পর্যন্ত তাদের পণ্য ফেরত নিতে আসেননি সেগুলো ব্যবসায়ীরা দোকান থেকে আলাদা করে রেখে দিয়েছেন।
বিএসটিআই এর খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামিদামি ব্র্যান্ডের ৫২ পণ্য জব্দ, ধ্বংস ও উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। খুলনায় আমরা সেই লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছি। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’