Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আন্দোলন স্থগিত করল ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৯, ১০:২৩ AM
আপডেট: ২০ মে ২০১৯, ১০:২৩ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ নেতার সঙ্গে আলোচনার পর রাজু ভাস্কর্যে এসে তারা কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

রবিবার রাত দেড়টায় তারা এই কর্মসূচি স্থগিত করে। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে টিএসসিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতানেত্রীদের ওপর হামলা করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারীরা।

হামলায় ঢাবির রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বিএম লিপি আক্তারসহ অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন।

হামলায় অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও রয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলাকারীদের বিচার দাবিতে শনিবার মধ্যরাতে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন হামলার শিকার ব্যক্তিরা।

সোমবার ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে গিয়ে মধুর ক্যান্টিনে হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতরা। তখনও চার নেত্রীসহ ৮ জন আহত হন।

ওই ঘটনার বিচার এবং বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন পদবঞ্চিতরা।

পরে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ দিতে বলেন।

পরে বিতর্কিত হিসেবে ১৭ জন জনের নাম প্রকাশ করে ছাত্রলীগ। তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিয়ে পদগুলো শূণ্য ঘোষণা করে বঞ্চিতদের পদায়নের ঘোষণাও দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা থাকলেও শনিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি ছাত্রলীগ। এছাড়া তারা যে বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেছে তাদের বিষয়েও কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি।

পদবঞ্চিত অংশের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ উদ্দিন বাবু যুগান্তরকে বলেন, বিতর্কিতদের বাদ দিতে আ’লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর জটিলতা নিরসনে কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে টিএসসিতে আলোচনায় বসি। সেখানে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নতুন কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-সম্পাদক লিপি আক্তারকে আপত্তিকর কথা বললে সেও এর প্রতিবাদ জানান। এর জের ধরে সেখানে উপস্থিত গোলাম রাব্বানীর কর্মীরা লিপিসহ পদবঞ্চিত কয়েকজনকে মারধর করেন।

এ বিষয়ে বিএম লিপি আক্তার যুগান্তরকে বলেন, মধুর ক্যান্টিনে কমিটি ঘোষণার দিন আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। শুরু থেকেই ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তিগতভাবে আমাদের আক্রমণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে ‘ভাইরাস’ বলেন এবং বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে তিনি আমার ওপরও আক্রমণ করেন। এ সময় তার অনুসারীরাও আমাদের ওপর হামলা শুরু করে। এতে আমাদের ৭-৮ জন আহত হন।

পদবঞ্চিতরা বলছেন, মারধরের শিকার হয়েছেন- ডাকসুর সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার ও নিপু ইসলাম তন্বী, ডাকসুর সদস্য ফরিদা পারভীন ও তানভীর হাসান সৈকত, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-সম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আজমীর শেখ, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার উপ-সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন।

হামলার প্রতিবাদে রাতেই বৃষ্টির মধ্যে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন নেতানেত্রীরা। এ সময় তারা প্রায় সবাই কাঁদছিলেন। রাত ৩টার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী সেখানে ছুটে যান এবং পদবঞ্চিতদের বুঝিয়ে অনশন থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা তাদের ওপর মধ্যরাতে হামলার বিচার দাবি করেন।

রাব্বানীর উদ্দেশে তারা বলেন, ‘ভাই আপনি কীভাবে মারতে পারলেন?,’ ‘আপনার উপস্থিতিতে কীভাবে আমাদের ওপর হামলা হল?’, ‘আমরা কি ছাত্রলীগ করিনি?’ এ সময় গোলাম রাব্বানী তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি সরি, তোমরা হলে ফিরে যাও। আমি কাল (রোববার) নেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসব।’

তানভীর হাসান সৈকত বলেন, লিপি আক্তারকে মারধর করায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ক্ষমা চাইতে হবে। বোনের গায়ে হাত দেয়া মেনে নেয়া যায় না।

অনশনের বিষয়ে তিনি বলেন, একমাত্র আপার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আশ্বাসে এখান থেকে উঠব। তা না হলে আমরা এখান থেকে যাব না। দলের হাইকমান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা আমাদের কথা রাখেনি। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেয়া, অথচ তারা তা দিতে পারেননি। হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, কাউকে মারধর করা হয়নি। কথা বলতে গিয়ে ‘হট টক’ হয়েছিল। আমি লিপির অন্তত ১০ হাত দূরে ছিলাম। লিপির গায়ে হাত দেয়াতো দূরে থাক ফুলের টোকাও লাগেনি। অন্য কাউকেও মারধর করা হয়নি বলে দাবি তার।

পদত্যাগের বিষয় তিনি বলেন, যেহেতু তারা সংগঠনের বদনাম করছে, তাই অভিমান থেকে পদত্যাগের কথা বলেছি। বিশেষ সিন্ডিকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী পদবঞ্চিতরা এসব করছেন বলেও দাবি তার।

Bootstrap Image Preview