আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে কৃষি ও এর উপখাতগুলোতে সরকারের বরাদ্দ ও বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব হিসেবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে সুপারিশমালা প্রদান করেছেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
আজ (১৯ মে, রবিবার) দুপুরে শেরেবাংলা নগরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডিস্থ সম্মেলন কক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে দেশের সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তিনি ওই সুপারিশমালা প্রদান করেন। সেসময় অর্থমন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এবার সুপারিশমালায় যেসব বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, সেগুলি হচ্ছে ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয়ের ব্যাপাারে উদ্যোগকে আরো বাস্তবমুখী প্রয়োগ করা, পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলা করে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে শস্যবীমা স্থায়ীভাবে চালু করা, দেশে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী ও খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা, কৃষিপণ্যের উন্নত ও আধুনিক বাজার ব্যবস্থা চালু করা, সরকারের বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা এবং বীজের মান নিশ্চিত করা, কীটনাশক আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষির যান্ত্রিকীকরণে কৃষককে আরও অভ্যস্ত করে তোলা এবং আমদানিকৃত কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর ভর্তুকি ও শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা এবং পোল্ট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানো, বীমা ব্যবস্থা চালু করা এবং এ খাতের বিদ্যুৎ বিল ও ঋণপ্রদানে কৃষিখাতের অনুরূপ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র খামারিদেরকে বাঁচাতে পোল্ট্রি নীতিমালা মাঠ পর্যায়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে উন্নয়ন সাংবাদিক শাইখ সিরাজ জাতীয় বাজেট সম্পর্কে কৃষককে অধিকার সচেতন করে তোলা এবং বরাদ্দ, প্রত্যাশা ও চাহিদা নিরূপণের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে প্রাক বাজেট আলোচনার আয়োজন করে আসছেন। এবার দেশের পাঁচটি স্থানে ওই প্রাক বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচটি জেলার প্রায় ২২ হাজার কৃষকদের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও সুযোগ সুবিধার সুফল প্রাপ্তি বিষয়ে একটি প্রকাশ্য জরিপের ফলাফল শাইখ সিরাজ তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রীর সামনে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রান্তিক কৃষক ও খামারিদের দাবি, প্রত্যাশা ও চাহিদা রাষ্ট্রের সামনে উপস্থাপনের এই কার্যক্রমটি অত্যন্ত অর্থবহ ও কার্যকর একটি আয়োজন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর মধ্য দিয়ে কৃষক ও সরকারের নীতি নির্ধারকের মধ্যে একটি যোগসুত্র তৈরি করে।
তিনি বলেন, এ সরকার বরাবরই কৃষির প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে। আগামীতেও তা অব্যাহত রাখতে কৃষকের পক্ষ থেকে জমা দেয়া সুপারিশমালার বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। আগামীতে দেশে চাল আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করে চাল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার অশ্বাস দেন।
এছাড়াও পোল্ট্রি খাতে বীমা প্রবর্তনের মাধ্যমে এ শিল্পে হঠাৎ ধ্বসকে রক্ষার আশ্বাসও দেন তিনি। আগামীকে বাহাজে কৃষি যন্ত্রপাতির উপর শুল্ক কমিয়ে কৃষকের কাছে আধুনিক কৃষি যন্ত্র সহজে পৌঁছে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সুপারিশমালা প্রদান অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের পাঁচটি স্থানে যথাক্রমে শরিয়তপুর, বাগেরহাট, কক্সবাজার, যশোর ও নাটোর জেলার কৃষকের সঙ্গে খোলা প্রাঙ্গণে কৃষির সমস্যা, সংকট, প্রত্যাশা, দাবি ও চাহিদা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে শরিয়তপুরে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, বাগেরহাটে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, কক্সবাজার সদরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, যশোরের মনিরামপুরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও নাটোরের নলডাঙ্গায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অনুষ্ঠানে কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট এর এবারের কার্যক্রম ও কৃষকের এবারের দাবি-দাওয়া সম্বলিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।