Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্ত্রী-মাকে নিয়ে হুজুরের যে ওয়াজ ভাইরাল!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০১৯, ০৪:০৪ PM
আপডেট: ১৯ মে ২০১৯, ০৪:০৪ PM

bdmorning Image Preview


পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নারীদের নিয়ে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর একটি ওয়াজ ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তিনি বলেছেন, যেসব নারীরা সংসারের কাজ করে তাদের আমরা তেমন মূল্যায়ন করতে চাই না। তবে তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ আপনার মা বা স্ত্রী ঘরে যে কাজগুলো করেন তা তাদের জন্য ইহসান। তারা তা করতে বাধ্য নয়।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পরই তার ওয়াজকে প্রশংসা করেছেন হাজার হাজার নেটিজেন।

সাহরির কথা উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, মা ওঠে, স্ত্রী ওঠে। সবার শেষে কে ঘুমায়? আপনার আমার মা ঘুমায়, স্ত্রী ঘুমায়। খবর নেন,  এগুলা মূল্যায়ন করেন। ইসলামে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।  রমাদান এগুলা শিক্ষা দিচ্ছে আপনাকে-আমাকে।  সকালে সবার আগে উঠেছে, খাবারগুলো গরম করেছে, রান্না করছে, ডাকতেছে উঠরে বাপ সময় নাই, তাড়াতাড়ি সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা-কাচ্চা সবাইকে নিয়ে খাবার সাজায় দিছে।  খাওয়ায়-টাওয়ায় আমরা ফুটানি করে মসজিদে চলে গেছি নামাজ পড়ার জন্য।  উনি আবার ওইগুলা তুলতেছে, গুছায় রাখতেছে।  সব রাখতেছে। যে বাচ্চারা আবার দিনের বেলা খাবে তাদের তরকারি আলাদা করে রেখে আবার নামাজ পড়তেছে।  নামাজ পড়ে আবার যে বাচ্চারা সকাল বেলা উঠে তাদেরকে আবার খাওয়াচ্ছে।

আমরা কিন্তু ভিআইপি ঘুমিয়ে আছি। রমজান মাস। আমরা এখন ঘুমের মধ্যে আছি। আরামের মধ্যে আছি। এখন কিন্তু রমজান মাস আমরা এখন ঘুমের মধ্যে আছি। রাতে কিন্তু তারাবিহ পড়েছি। 

এরপর আপনার-আমাদের বাচ্চাকে দুপুরে খাওয়াচ্ছে। ইফতারি বানাচ্ছে। ইফতারগুলো গুছায় দিচ্ছে। আপনি-আমি ইফতার করে জামাতে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা তো পুরো ইফতারি করে যাই না। নামাজ পরে এসে আবার ইফতারি করি।

এরপর তারাবিহতে গেলাম। তারাবির পর এসে আবার রেডিমেড খাবার পেয়ে যাচ্ছি। রেডি খাবার পেয়ে আপনি আমি আরামের জন্য যাচ্ছি।  শুয়ে ইন্টারনেটে লেগে যাচ্ছি। দেখিতো টিভিতে সারাদিন কী ঘটলো। উনি তখনো রান্নার জিনিস গুছিয়ে আবার জোগাড় করতেছেন।  খেয়াল করে দেখেন, আপনার আমার স্ত্রী, আপনার আমার বোন, আপনার আমার মা-তারা কী করছেন।

আপনি এই মানুষগুলার জন্য আল্লাহর কাছে কী দিয়েছেন। তাদেরকে আপনি কী মনে করেছেন? বিয়ে করে নিয়ে আসছেন তাই আপনার জন্য এইগুলা করতে বাধ্য তারা?  তারা আপনার আমার জন্য এইটা ইচ্ছাকৃতভাবে করতেছে।

সুতরাং এই মানুষগুলার জন্য সহানুভূতিশীল হতে হবে। এই মানুষগুলার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে। তাদের উপহার দিতে হবে। তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হবে। তাদেরকে ধন্যবাদ না দিলে আল্লাহর কাছে ধরা খাবেন।

হযরত ওমর (রাঃ) এর বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন,এক লোকের স্ত্রী তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তাই সে সিদ্ধান্ত নিল তার স্ত্রীকে তালাক দেবে। পরে সে এই সমস্যা সমাধানের জন্য হযরত ওমর (রাঃ) এর কাছে যায়।

হযরত ওমর (রাঃ) এর বাড়িতে যাওয়া পরে তিনি বাইরের থেকে হযরত ওমর (রাঃ) এর স্ত্রীর চিৎকার ও চেঁচামেচি শুনতে পেল এবং নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন আমার আর বিচার দেওয়ার দরকার নেই।

কারণ হযরত ওমর (রাঃ) এর স্ত্রী যেভাবে চিৎকার ও চেঁচামেচি করছেন তা আমরার স্ত্রীর চেয়ে অনেক গুণে বেশি। তখন তিনি বাড়ির দিকে রওনা হলেন। পরে হযরত ওমর স্ত্রী সঙ্গে কথা শেষ করে দরজা খুলে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান।

পরে তাকে ডেকে বলেন, তুমি কেন এসেছিলে। পরে লোকটি তার স্ত্রীর খারাপ আচরণের কথা বলে। শুনে হযরত ওমর তাকে বলেন, স্ত্রী আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে আমি কিছু মনে করি না। কারণ তিনি আমার সংসার ও ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক কষ্ট করেন। আমার সেবাযত্ন করেন। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক। পরে লোকটি চলে গেলেন ও তার ভুল বুঝতে পারেন।

এই মাওলানা বলেন, সবার আগে উঠে কে, আর সবার শেষে ঘুমায় কে? কাপড় ধোয়া, রান্না করা, ঘর গোছানো, সন্তান সামলানো কেবল মা আর স্ত্রীদের দায়িত্ব ভাবছেন? কী মূল্যায়ন করেছেন তাদের? এসব তাদের দায়িত্ব নয়। এসব হচ্ছে এহসান।

তিনি আরও বলেন, অনেকে বলে থাকেন বউয়ের মেজাজ খিটখিটে, কেন খিটখিটে কখনও ভেবে দেখেছেন, খবর নিয়েছেন, একদিন বাচ্চাদের যত্ন নেন, ঘর গোছান, মসলা বাটেন, রান্না করেন দেখবেন মেজাজ ঠিক থাকবে না।

মাওলানা বলেন, অনেকে স্ত্রীদের কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান না, উপহার সামগ্রী কিনে দেন না, সারা বছর একই কাজ সে শুধু করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে, কোনো মানুষের মেজাজ ঠিক থাকবে। কতদিন পর্যন্ত তিনি পারবেন। আর কেনই বা তার মেজাজ ঠিক থাকবে।

স্ত্রীকে সম্মান করার নাম এহসান উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি এহসান হয়, গিফট বিনিময় হয়, হাদিয়া বিনিময় হয় তবে আপনি নিয়ামত পাবেন।

রাজধানীর পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওই ওয়াজটি তার ফেসবুক পেজে গত বুধবার শেয়ার দেন।  এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ভিডিওটি ভিউ হয়েছে, সাত লাখ ৯০ হাজার বার। ভিডিওটি ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ শেয়ার দিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview