Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সব সঙ্কটের কারণ লোভ আর অসহিষ্ণুতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০১৯, ০৩:০৪ PM
আপডেট: ১৯ মে ২০১৯, ০৩:০৪ PM

bdmorning Image Preview


মহামতি গৌতম বুদ্ধকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো, মানুষের জীবনে এতো অশান্তির কারণ কী? বুদ্ধ বলেছিলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা’। পৃথিবীর নামকরা পণ্ডিতেরা যে প্রশ্নের উত্তর হাজারো শব্দ-বাক্য বলে বোঝাতে পারেননি, ভগবান বুদ্ধ এর জবাব দিয়েছিলেন একটিমাত্র শব্দে : আকাঙ্ক্ষা।

নিশ্চয়ই ‘আকাঙ্ক্ষা’ বলতে বুদ্ধ আমাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে অত্যাবশ্যক উপকরণগুলো পাওয়ার বাসনা বা চেষ্টাকে বোঝাননি; ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্যে যা প্রয়োজন, তা যোগানোর চেষ্টার মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু মানুষ যখন নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে, সেই ‘বাড়তি’র প্রতি অযৌক্তিক বাসনাই আসলে বুদ্ধের উপলব্ধিতে ‘আকাঙ্ক্ষা’। এই আকাঙ্ক্ষা অন্যের জন্যে যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ব্যক্তির নিজের জন্যেও ক্ষতিকর।

বাড়তির প্রতি আকাঙ্ক্ষা আসলে লোভ। বাড়তির কোনো পরিমাপ নেই; তাই বাড়তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আসলে সীমাহীন। একজন ব্যক্তির ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে কতো টাকা দরকার? কতোটুকু জমি দরকার? কতোটা খাবার দরকার?

সীমাহীন বাড়তি দ্রব্য বা সেবা অর্জনের লোভ থেকে ব্যক্তি অন্যের অধিকারে থাকা সম্পদ বা অনুষঙ্গের ওপর নজর দেয়; সেগুলোকেও নিজের হস্তগত করতে উদ্যোগী হয়। ফলে অন্য ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্যেই আমরা দেখি, ধনিক শ্রেণি ক্রমশ আরো ধনবান এবং দরিদ্র শ্রেণি আরো দরিদ্র হচ্ছে। এতে যে সম্পদ হারাচ্ছে, সে যেমন অশান্তিতে ভোগে, তেমনি যে আরো ধনবান হচ্ছে, আরো বেশি পাওয়ার লোভ আসলে নানাভাবে তারও মনের শান্তি নষ্ট করে। বেশির লোভে আমরা মানুষের ক্ষতি করছি, প্রকৃতির ক্ষতি করছি; এর মূল্য একসময় গোটা মানবজাতিকে তার অস্তিত্ব বিসজর্নের মাধ্যমে দিতে হবে।

পৃথিবী জুড়ে যে অশান্তি আর নানা ধরনের সঙ্কট আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তার আরেকটি কারণ হলো অসহিষ্ণুতা। মানুষের মধ্যে উদারতা কমে গেছে, অন্যের মতামতকে গ্রহণ বা সম্মান করা দূরে থাক- সহ্য করার শক্তিই কমে গেছে। প্রতিটি ব্যক্তি আলাদা; তাই প্রত্যেকের মতামত, ভাবাদর্শ, জীবনবোধ এবং জীবনাচারে ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। আর যতোক্ষণ পর্যন্ত সেই ভিন্নতা অন্যের জন্যে অকারণ ক্ষতির কারণ হয়ে না ওঠে, ততোক্ষণ পর্যন্ত সেই ভিন্নতাকে সম্মান জানাতে ও গ্রহণ করতে সমস্যা কোথায়?

এই সহজ সত্যটুকু উপলব্ধি করতে পর্যন্ত মানুষ রাজি নয়। প্রত্যেকেই মনে করে, পৃথিবীটা তার মতো করে চলতে হবে। এটি বোঝা দরকার, পৃথিবী চলবে পৃথিবীর মতো করে, প্রতিটি ব্যক্তি চলবে তার নিজের মতো করে- অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একজন ব্যক্তির অন্য ব্যক্তির বিশ্বাস বা জীবনাচারে বাধা দেয়ার কী প্রয়োজন রয়েছে আর কী অধিকারই বা রয়েছে?

পরমতসহিষ্ণুতা নিজেই এক উদার ধর্ম; এই ধর্ম গ্রহণ করলে মানবজাতির বহু সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান মিলতে পারে।

সহকারি অধ্যাপক; জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ; স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। লেখক ও গবেষক।
[email protected]

Bootstrap Image Preview