Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রিয় মা-বাবা, একটা মেয়ের কাছে তার মানসম্মানটাই সবচেয়ে বড়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০১৯, ১০:২৬ PM
আপডেট: ১৮ মে ২০১৯, ১০:২৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


নবম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা লাঞ্ছিত হয়েছিল। এরপর শুরু হয় তার ওপর মানসিক নির্যাতন। বাইরে বের হলে তাকে শুনতে হতো নানা কটূক্তি। নিন্দুকেরা বলত, লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রভাব পড়বে বোনদের ওপর। তাদের বিয়ে হবে না। 

চলে যাবার আগে বর্ষা লিখেছিল- নিজের লজ্জার কথা বার বার সবাইকে বলতে বলতে আমি নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন পরপুরুষের কাছে আমি আর এসব বলতে বলতে পারছি না। অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আর নিজের মানসম্মান ফেরত পাব না। তাই আমাকে ক্ষমা করো।

আত্মহত্যার আগে নিজের লেখা চিঠিতে মা-বাবার উদ্দেশ্যে এসব কথা লিখেছে জেলার মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আকতার বর্ষা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মোহনপুর উপজেলা সদরের নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।

এদিকে মোহনপুর থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে সুমাইয়ার বাবা আব্দুল মান্নানের মামলায় তিনজনকে আটক করেছে। এরা হলেন, সকিনা বেগম, খালাতো ভাই রাব্বি ও খালু রাসেল। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল পুলিশ সুমাইয়াকে উত্যক্তকারী মুকুল হোসেন ও তাকে সহায়তাকারী সুমাইয়ার বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে আসামির পরিবারের লোকজন প্রতিনিয়ত সুমাইয়া ও পরিবারের লোকজনকে গালাগাল করছিল।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে পাশের বাড়ির আনিস উদ্দিনের ছেলে মুকুল হোসেন (২০) সুমাইয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় গত ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় মুকুল ও তার সহযোগীরা সুমাইয়াকে অপহরণ করে। এ কাজে সহযোগিতা করে সুমাইয়ার এক বান্ধবী।

পুলিশ জানায়, ওই দিন সন্ধ্যায় স্থানীয়রা খানপুর বাগবাজার এলাকা থেকে সুমাইয়াকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। সুমাইয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

নিহতের পারিবার থেকে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সুমাইয়া পুকুরে গোসল করতে গেলে আসামি পক্ষের লোকজন তাকে কটূক্তি করে। সুমাইয়া বাড়ি ফিরে বিষয়টি মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের জানায়। পরে বিকেল চারটার দিকে সুমাইয়া খাতায় মা-বাবার উদ্দেশ্যে চিঠি লেখে।

চিঠিতে সুমাইয়া লিখেছে, ‘প্রিয় মা-বাবা, প্রথমেই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক আদর, অনেক ভালোবাসা। কিন্তু একটা মেয়ের কাছে তার মানসম্মানটাই সবচেয়ে বড়।

এ চিঠি লেখার পর পাশের শোবার ঘরে বাঁশের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে সুমাইয়া আত্মহত্যা করে। পরে পরিবারের সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে।

সুমাইয়ার বাবা আবদুল মান্নান বলেন, বাইরে বের হলে তার মেয়েকে বাজে কথা শুনতে হতো। আমাদেরও বাজে কথা শুনতে হতো। মেয়ে বলত, বাবা, আমার জন্য তোমাদের বাজে কথা শুনতে হচ্ছে। ওরা বলে, আমার কারণে নাকি বোনদের বিয়ে হবে না।

Bootstrap Image Preview