ময়মনসিংহে ফুলপুরে ক্যানসার আক্রান্ত দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে সহায়তা করছেন ফুলপুরের হেলডস ওপেন স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা। প্রথম দিনে ক্যান্সার আক্রান্ত এক কৃষকের ৮০ শতক জমির ধান কেটে দিয়েছেন তারা। এর তালিকা ধরে চলতি মৌসুমে ২৫ জন দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে দেবে বলে জানিয়েছেন এই স্বেচ্ছাসেবীরা।
ক্যানসারে আক্রান্ত দরিদ্র বর্গা চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক। তার ৮০ শতাংশ জমিতে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু সেই ধান কাটার মতো শক্তি তার নেই। পরিবারে লোকজন নেই। শ্রমিক নিয়োগের টাকাও নেই। অথচ এ ধান কেটে তার নিজের চলতে হবে। আবার জমির মালিককেও ধান দিতে হবে।
এদিকে বর্তমান বাজারে এক মন ধানের দাম ৫০০ টাকা। আর একজন শ্রমিকের একদিনের মজুরি ৯০০ টাকা। অসুস্থ ও দরিদ্রতার কারণে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়ে যান আবু বক্কর। সে সময়ই সহযোগিতার হাত বাড়ালেন স্কাউট সদস্যরা। সোমবার (১৩ মে) ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিলেন তারা।
ফুলপুরের হেলডস ওপেন স্কাউট গ্রুপের (হেলথ, এনভায়রনমেন্ট, লিটারেসি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) সদস্যরা তার ৮০ শতাংশ জমির ধান কেটে তা বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য পুরো উপজেলায় অতিপরিচিত এ স্কাউট গ্রুপটি। এই গ্রুপের দলনেতা তাসফিক হক নাফিও জানান, এবার ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেক দরিদ্র চাষীই ধান কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে।
তাই তারা সিদ্ধান্ত নেন কয়েকজন দরিদ্র কৃষকের জমির ধান তারা স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে দেবেন। এরপর তারা তালিকা তৈরি করেন। এ রকম ১১ জন কৃষকের তালিকা তারা তৈরি করেছেন। তালিকার প্রথম নামটি ছিল কৃষক সিদ্দিকের। গতকাল তারা সেই কৃষকের ধান কেটে দেন। ধান কাটার পর তা কৃষকের বাড়িতেও পৌঁছে দেন।
নাফিও জানান, কৃষক সিদ্দিকের বাড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। সকাল ৮টায় তারা সদরে জমায়েত হন। এরপর ৯টায় রূপসী ইউনিয়নের ঘোমগাঁও গ্রামে পৌঁছে ধান কাটা শুরু করেন। গতকাল সোমবার তারা ছিলেন মোট ২০ জন। তবে তাঁদের দলে মোট সদস্য ৫০ জন। তারা পালা করে এ কাজ করবেন।
ধান কাটায় অংশ নেওয়া স্কাউট মিলন মিয়া বলেন, প্রথমবার ধান কাটলাম। অনেক ভালো লেগেছে যে একজন অসহায় মানুষের উপকার করেছি।
কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসা করে সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। অনেক কষ্ট করে বোরো ধান করলেও শ্রমিক না পেয়ে হতাশায় ছিলাম।’
হেলডস ওপেন স্কাউট গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘ধানের দাম কম, আবার শ্রমিক সংকটের বিষয়টি এখন সারা দেশের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের কার্যকর উপায় খুঁজতে গিয়ে আমরা মানববন্ধন বা দাবি আদায়ের কোনো কর্মসূচি পালন না করে সরাসরি সমস্যা সমাধানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই ধান কাটা। আমাদের এ উদ্যোগ চলমান থাকবে। সদস্যরা আগে কোনো দিন ধান কাটেননি। স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে তারা আনন্দিত।’
এব্যাপারে ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল বলেন, এই ধরণের সামাজিক সংগঠন যদি এগিয়ে আসে তবে তা দারুণ উদ্যোগ হবে।
ময়মনসিংহ জেলায় এবার বোরো মৌসুমে ২ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।