Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বন্ধ ঘরে মিললো মা-মেয়ে ও ছেলের লাশ, ভৈরবজুড়ে শোকের মাতম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৯, ১০:২২ PM
আপডেট: ১৩ মে ২০১৯, ১০:২২ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানীর উত্তর খান এলাকার একটি বাসা থেকে দুই সন্তানসহ এক মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত রবিবার (১২ মে) দিবাগত রাতে প্রতিবেশীরা বাসার ভেতর থেকে বাজে গন্ধ পায়। এ সময় তারা ডাকাডাকি করে বাসার ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে বাসার ভেতর থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় দুই সন্তানসহ এক মায়ের মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহতরা হলেন, মা জাহানারা বেগম মুক্তা (৪৮), ছেলে কাজী মুহিব হাসান রস্মি (২৮) ও মেয়ে আফিয়া সুলতানা মীম (২০)। নিহত মা জাহানারা বেগমের স্বামীর নাম মৃত ইকবাল। তাদের গ্রামের বাড়ি ভৈরব শহরের জগনাথপুর এলাকায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত জাহানারা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন বিআরডিবি অফিসের শাখা ম্যানেজার ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে চাকরিরত অবস্হায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এসময় তিনি বি-বাড়ীয়ায় বাসা নিয়ে বসবাস করতেন। ইকবাল হোসেনের মৃত্যুর পর তার পরিবার ঢাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

এরপর গত দুইমাস আগে তার পরিবার ভৈরবে নিজ বাড়ির পাশে একটি ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। দুইমাস থাকার পর চলতি মাসের ৭ তারিখে ঢাকায় নতুন বাসায় উঠেন। জাহানারা বেগমের ছেলে মুহিব সম্প্রতি শেষ হওয়া ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়েছিল। মেয়েটি ছিল প্রতিবন্ধী।

প্রতিবেশী মোঃ ওয়াহিদ মিয়া জানায়, ইকবাল হোসেনর বাড়িটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিয়ে নেয়ার পর নতুন করে তিনি এলাকায় ভাইদের সাথে একসাথে বাড়ি কেনেন। বাড়ির ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে তার ভাইদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ ছিল।

এলাকাবাসী জানায়, বিরোধের কারণে তাদের বাড়িতে তাদের কোন থাকার ঘর ছিল না। এ বিষয়টি নিয়ে সম্পত্তির ভাগভাটোয়ারা করতে আগামী ঈদের পর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসার কথা ছিল।

তবে ঠিক কি কারণে তাদের মৃত্যু হলো স্বজনদের কেউ বলতে পারছে না। ঘটনায় পরিবারের সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এ ঘটনার বিষয়ে মৃত ইকবাল হোসেনের ভাগ্নি নিগার সুলতানা জানান, আমার মামা মারা যাওয়ার পর পরিবারটি অর্থনৈতিক কষ্টে ভুগছিলেন। তবে তার ছেলেটি মেধাবী ছাত্র ছিল। সিলেট এগ্রিকালচার ভার্সিটি থেকে পাশ করার পর এবার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিল ছেলেটি। এভাবে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হবে তা ভাবতেও পারেনি তারা।

নিহত জাহানারার দেবর মোঃ জুবায়ের জানান, তিনি তার ভাই আহসান উল্লাহকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা তা পুলিশকে সঠিক তদন্ত করে উদঘাটন করতে হবে। কারণ একসাথে তিনজন মানুষ কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না বলে তিনি দাবি করেন এবং ঘটনার রহস্য বের করতে পুলিশকে অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এলাকার পৌর কাউন্সিলর মোঃ ফজলুর রহমান জানান, এলাকায় পরিবারটি ছিল নিরীহ পরিবার। ইকবাল হোসেনের মৃত্যুর পর পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধি মেয়েটির চিকিৎসা ও ছেলে লেখাপড়া এবং সংসার নিয়ে জাহানারা খুব চিন্তিত ছিলেন। তবে তিনজন একসাথে আত্মহত্যার বিষয়টি সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিনজনের মরদেহ ভৈরবে তাদের নিজ এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হবে।

Bootstrap Image Preview