Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক মঞ্চে মেনন, কামাল, ফখরুল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৯, ০৫:১৬ PM
আপডেট: ১৩ মে ২০১৯, ০৫:১৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রাজনীতিতে সৌহার্দতা ফুরিয়ে গিয়েছে বলে অনেকেরই ধারণা। সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে আবারও এক হলো বিভিন্ন দলের মুখপত্ররা। ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ, বিদ্বেষপূর্ণ, হিংসাত্মক ও দলাদলির রাজনীতিতে’ সচরাচর এমন দৃশ্য দেখা যায় না। 

সোমবার (১৩ মে) রাজনীতির মঞ্চে দেখা গেছে এমনই দৃশ্য। ভিন্ন সংগঠনের হলেও এক মঞ্চে বসেছিলেন বিভিন্ন দলের মুখপাত্ররা।

গত কয়েকদিন আগে মারা গেছেন বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। তার স্মরণে শোক সভায় ছিলেন উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ওই মঞ্চে আরো ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, নাগরিকের ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব সহ বহু রাজনীতিবিদ।

আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক মাহফুজ উল্লাহ’র প্রয়াণে নাগরিক শোক সভায় বিপরীতমুখি ও বিপরীত আদর্শের এই রাজনীতিবিদদের একই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়।

এই সময় বিচ্ছিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে শোক সভায়। রাশেদ খান মেনন বক্তব্য দিতে দাঁড়ালে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত সবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।

তিনি বলেন, এই মঞ্চে রাশেদ খান মেনন বক্তব্য দেওয়ার নৈতিকতা হারিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে কক্ষ ত্যাগ করছি- এই বলে তিনি বেরিয়ে যান।

এসময় ‘ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পর কেন রাশেদ খান মেনন বক্তব্য রাখেবন’- এমন প্রশ্ন করতে দেখা যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকেও। বিচ্ছিন্ন এই ঘটনা বাদে তবে বাকি অনুষ্ঠান ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়।

শোক সভায় ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর প্রয়াণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক পর্যায়ে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নেই বলে গ্যারান্টি দিয়ে কথা বলেন।

ড. কামাল বলেন, গ্যারান্টি দিতে পারি, আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নাই। যারা মনে করেন স্বৈরতন্ত্রকে চাপা দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, বিভিন্ন রকমের প্রভাব খাটিয়ে চিরস্থায়ী হতে পারে, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। স্বৈরতন্ত্রের আলামতগুলো চারদিকে লেগে থাকে। সেই কারণে নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নাই। এখানে যে উপস্থিতি সকলেই ঐক্যের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।

কামাল হোসেন বলেন, স্বৈরাতন্ত্র অনেকবার এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছে। চেয়েছিল চিরস্থায়ী হতে। কিন্তু পারে নাই। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিতে পারি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নাই। যারা মনে করেন স্বৈরতন্ত্রকে চাপা দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, বিভিন্ন রকমের প্রভাব খাটিয়ে চিরস্থায়ী হওয়া যায় তাহলে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করেন।

প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ’র প্রসঙ্গে এই প্রবীন নেতা বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি তখন থেকে তাকে (মাহফুজ উল্লাহ) চিনি। আজকে আমি মোটেও নিরাশ নই। কারণ মাহফুজ উল্লাহকে শ্রদ্ধা জানাতে সব মহলের লোক এখানে একত্রিত হয়েছে। উনাকে সম্মান জানাচ্ছেন কেন, কারণ তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। যখন উচিত কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তখন তিনি উচিত কথা বলেছিলেন।

একই মঞ্চে মির্জা ফখরুল চলমান সময়কে গণতন্ত্রহীন দাবি করে বলেন, কঠিন এই সময়ে সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক মাহফুজ উল্লাহর মতো উদার, সহিঞ্চু ও অনুপ্রেরণাদায়ক সাহসী ব্যক্তির বড় প্রয়োজন ছিলো। তার অকাল প্রয়ান দেশের গণতন্ত্রাতিক মুক্তি আন্দোলনের জন্য বড় ক্ষতি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রহীন, অধিকারবিহীন রাষ্ট্রে মাহফুজউল্লাহ সত্য কথা বলার মধ্য দিয়ে আমাদের জাগিয়ে তুলেছেন। আমাদের জেগে উঠতে হবে। আসুন আমরা তার চিন্তা বাস্তবায়নে অবদান রাখি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশে মুক্তিবুদ্ধি চর্চা ও লেখা কঠিন। কিন্তু মাহফুজউল্লাহ তা পেরেছেন। যে সমাজে কথা বলা দুঃসহ। সেখানে তিনি কথা বলেছেন, লিখে গেছেন। হুমকি-ধমকির মুখেও তিনি লিখে গেছেন। আমৃত্যু্ তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। তার লিখিত বই ৫০ এর ঊর্ধ্বে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে বই লিখেছেন মাহফুজউল্লাহ। এমন সময় লিখেছেন যে সময় বুদ্ধিজীবীরা এই দুই নেতার ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না। তিনি চাইলে বড় একজন রাজনীতিক হতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সাংবাদিক হিসেবে রাজনীতিকে তিনি দেখেছেন।

এই অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, মাহফুজ উল্লাহর অবদান ভুলে যাওয়া যাবে না। সাংবাদিক হিসেবে পরিবেশ সাংবাদিকতায় প্রভাব তিনি সৃষ্টি করেছিলেন তা অনবদ্য। তিনি পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃত ছিলেন।

মাহফুজ উল্লাহর স্মরণ সভায় বিভিন্ন দল মত ও পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ গ্রহণ করেন। ড. আকবর আলি খানের সভাপতিত্বে এতে অন্যতম ছিলেন সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরউল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন, নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির সহ অনেকে।

Bootstrap Image Preview