Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বোরোর বাম্পার ফলন হলেও দাম কম, লোকসানে কৃষক

মোঃ মনিরুজ্জামান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১ মে ২০১৯, ০৯:৪৪ PM
আপডেট: ১১ মে ২০১৯, ১০:১৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ বিডিমর্নিং


কুড়িগ্রামে ধানের বাজারমূল্য কম থাকায় বোরোতে বিঘাপ্রতি প্রায় ২হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে জেলার কৃষকদের। যারা জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন, তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। উৎপাদন খরচ না ওঠায় ধান সংগ্রহের জন্য শ্রমিকের মজুরি দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুড়িগ্রামে ধানচাষীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৯৭ হাজার জন। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে আবাদ হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে। কিছু জমিতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ঘটলেও সার্বিকভাবে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।

জানা গেছে, জেলায় প্রতিবিঘা জমিতে হাল দিতে কৃষকের ১ হাজার ৬০০ টাকা, চারা বাবদ ৩০০, রোপণের জন্য শ্রমিকের মজুরি ১ হাজার ৬০০, সার বাবদ ১ হাজার ১০০, নিড়ানি ৬০০, সেচ ১ হাজার ৬৫০, কীটনাশক বাবদ ৩০০ টাকা এবং কাটা-মাড়াইয়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। সবমিলে এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে কৃষককে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হয়েছে।

এবার এক বিঘা জমিতে গড়ে ধানের ফলন হয়েছে ১৮ মণ। বর্তমানে বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৪৫০ টাকায়। এ হিসাবে এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৮ হাজার ১০০ টাকা। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি কৃষককে প্রায় ২ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। জমি বর্গা নেয়া কৃষকদের উৎপাদিত ধানের অর্ধেক জমির মালিককে দিয়ে দিতে হয়। এ কারণে তাদের লোকসান আরো বেশি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ধানের দাম কম থাকায় তাদের এ লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

কৃষকরা জানান, লোকসানের কারণে তারা শ্রমিকের মজুরি দিতে পারছেন না। এ কারণে কাটা হয়নি এমন জমির ধানও সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আবার এত কষ্ট করে উৎপাদিত ধান জমিতে ফেলে রাখতেও পারছেন না। বর্তমানে শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য শতকপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং মাড়াইয়ের জন্য ২০ টাকা হারে মজুরি নিচ্ছেন।

জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের ডোবারপার গ্রামের কৃষক আসাদুল জানান, আমি এ বছর প্রায় ১ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। পুরো জমিটাই বর্গা নেয়া। নিজের জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি। যে ধান পেয়েছি মজুরি ও খরচ মেটাতে শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে টাকার অভাবে বর্গা জমির ধান এখনো ঘরে তুলতে পারিনি। ধান এখনো ক্ষেতেই পড়ে আছে। কী যে করব, ভেবে পাচ্ছি না।

অন্যদিকে সদর উপজেলার ভোগডাংগা ইউনিয়নের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, পরের মৌসুমে আর ধানের আবাদ করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেননা, যে ধান আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা। সে ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। ধান যদি ঘরে তোলার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে পরে খাব কী?

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, প্রতি বছরই বোরোর ভরা মৌসুমে বাজারে ধানের দাম কম থাকে। তবে মৌসুমের শেষের দিকে দাম বাড়ে। কৃষকরা কষ্ট করে হলেও ধান ধরে রাখতে পারলে তখন ভালো দাম পাবেন।

Bootstrap Image Preview