ধৈর্য্য বা সবর শব্দটি আরবী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বিরত থাকা, সহিষ্ণুতা, মেজাজের ভারসাম্যতা, আত্মসংযম, অটল-অবিচল থাকা, অধ্যবসায়। আর পারিভাষিক অর্থে ধৈর্য্য বলতে আমরা বুঝি, যুগের পরিবর্তিত পরিবেশে নিজের মন-মেজাজকে পরিবর্তন না করা বরং সর্বাবস্থায়ই এক সুস্থ ও যুক্তিসঙ্গত আচরণ রক্ষা করে চলা।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেনঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর। (সুরা আলে ইমরান,আয়াত: ২০০)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা ও ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।(সুরা বাকারা,আয়াত: ১৫৫)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সুরা যুমার আয়াত: ১০)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ হে ঈমানদারগন! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সুরা বাকারা,আয়াত: ১৫৩)
হে নবী সেভাবে ধৈর্য্য অবলম্বন করো, যেভাবে উচ্চ সংকল্প সম্পন্ন রাসূলগণ করেছেন। আর এই লোকদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না।’ (আহকাফ ৩৫)
হে মুহাম্মদ, তোমার পূর্বেও অসংখ্য রাসূলকে অমান্য করা হয়েছে। কিন্তু এই অস্বীকৃতি ও যাবতীয় জ্বালাতন নির্যাতনের মোকাবেলায় তারা ধৈর্য্য অবলম্বন করেছেন। অবশেষে তাদের প্রতি আমার সাহায্য এসে পৌঁছেছে সুতরাং তুমিও ধৈর্য্য অবলম্বন করো।’ (আনয়াম ৩৪)
ধৈর্য্য সম্পর্কে হাদীস: আবু সাইদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য্য ধারণের চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্যে্যর শক্তি প্রদান করবেন। আর ধৈর্য্য হতে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি।’ (বুখারী, মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন মুসলিম ব্যক্তি মানসিক বা শারীরিক কষ্ট পেলে, কোন শোক বা দুঃখ পেলে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে সে যদি ধৈর্য্য ধারণ করে তাহলে আল্লাহ তার সব গুণাহ মাফ করে দেবেন। এমনকি যদি সামান্য একটি কাটাও পায়ে বিধে তাও তার গুণাহ মাফের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’ (বুখারী, মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন নর-নারীর উপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে। কখনও সরাসরি তার ওপর বিপদে আসে, কখনো তার সন্তান মারা যায়, কখনো তার ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়। আর সে এসব মুসিবতে ধৈর্য্য ধারণ করার ফলে তার কালব পরিষ্কার হতে থাকে এবং পাপ পঙ্কিলতা হতে মুক্ত হতে থাকে। অবশেষে সে নিষ্পাপ আমলনামা নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হয়।’ (তিরমিযি)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোককে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় সে বাহাদুর নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে বাহাদুর সেই ব্যক্তি যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে পারে।’ (বুখারী, মুসলিম)