Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আখেরাতের সদাই করার শ্রেষ্ঠ সময়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ মে ২০১৯, ১০:৪১ AM
আপডেট: ১০ মে ২০১৯, ১০:৪১ AM

bdmorning Image Preview


বর্ষার ঝিরঝির বর্ষণে সিক্ত হয় মাটি। এ মাটি থেকেই মাটির দেহের সৃষ্টি। মাটির দেহে নূরের বাতি জ্বলে জীবন ভর।

যেদিন এ বাতি নিভে যাবে, সেদিন এ দেহখানাও অকেজো হয়ে পড়বে। তখন আর কেউ এক মুহূর্তের জন্য আমাকে চাইবে না। আমিতো এখানে নেই।

চলে গেছি সেখানে। হে পাঠক! সেখানে যাওয়ার আগে এখানে বসে আমাদের সদাই করে যেতে হবে। গিন্নি আপনাকে বাজারে পাঠিয়েছেন বাজার শেষে আপনি বাসায় ফিরবেন।

কিন্তু হায়! বাজারের রং-তামাশা দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত গভীর হয়েছে, আপনি টেরই পাননি। একে একে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।

তামাশা দেখানো লোকটিও এখন তার গাঁট্টি-পোঁটলা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। এখন আপনার আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

এক আল্লাহর অলি খুব কাঁদতেন আর বলতেন, দুনিয়ার বাজারে তুমি দিনভর রং-তামাশা দেখতে দেখতে সব দোকান বন্ধ হয়ে গেলেও পরদিন বাজার করার সুযোগ পাবে। দুনিয়ার কোনো মামলায় একবার তুমি হারলে আবার লড়ার সুযোগ পাবে। ও আল্লাহর বান্দা! কিন্তু আখেরাতের এ বাজারে যদি তুমি সব ভুলে সদাই করতে না পার, আখেরাতের মামলায় যদি তুমি একবার হেরে যাও, মনে রেখ, আর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ কখনও পাবে না।

আখেরাতের সদাই করার শ্রেষ্ঠ মাস রমজান। আমরা যদি ঠিকভাবে রোজা পালন করি, তবে এ একমাসে আমরা যত বেশি লাভবান হব, জীবনে এর চেয়ে বেশি লাভের সুযোগ আর কখনও আসবে না।

তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, আমরা যেন ঠিকভাবে, যেভাবে কোরআন বলেছে, নবীজি (সা.) দেখিয়েছেন, সেভাবে যেন সিয়াম পালন করতে পারি।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেছেন, একজন মুমিন তখনই কোরআনে বলা সিয়াম পালন করতে পারবে, যখন সে রাসূলের দেখানো নিয়মে সিয়ামব্রত করবে।

আর এ ধরনের সিয়াম পালনের জন্য তাকে অবশ্যই দেহের প্রতিটি অঙ্গের সিয়াম পালন করতে হবে। শুধু তাই নয়, মনের সিয়ামেও তাকে ব্রত নিতে হবে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা-পর্যন্ত না খেয়ে, যৌনাচার থেকে বিরত থেকে আমরা যে সিয়াম পালন করি, এ সিয়াম খুব সাধারণ সিয়াম, এর চেয়ে একটু ওপরের স্তরের সিয়াম যাপন শিখতে হবে সিয়াম করে করে।

আরবি সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। আমরা শিখেছি, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া ও যৌন কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম। শুধু এতটুকু বিরত থাকাই কি সিয়াম? না, রাসূল (সা.) আমাদের যে সিয়াম শিখিয়েছেন তাতে আরও বলা আছে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং মনের প্রতিটি কোনে গোনাহ ঝেড়ে ফেলাই হল আসল সিয়াম।

রাসূল (সা.) এর ভাষায়- রোজা বান্দার জন্য ঢালের মতো। তোমাদের কেউ যদি রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে। আল্লাহর নিষেধ করা কোনো কাজ না করে। মূর্খের মতো কথা না বলে। কেউ যদি তাকে গালি দেয়, সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’

কেউ যদি কাউকে গালি দেয়, তবে সেও তাকে ওই পরিমাণ গালি দিতে পারবে। এটা হল ন্যায়বিচার। একবার রাসূল (সা.) এর কাছে এক সাহাবি এসে বলল, হুজুর! ওমুক আমাকে গালি দিয়েছে।

রাসূল (সা.) বললেন, তুমি চাইলে তাকে অতটুকু গালি দিতে পার কিংবা ক্ষমাও করে দিতে পার। সাহাবি বলল, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু, আমরা দেখছি, রোজা এলে রাসূলের কথা বদলে গেল। তিনি বললেন, কেউ গালি দিলে তুমি গালি দিও না। শুধু বল, আমি রোজাদার। এর মানে হল, আমি রোজাদার। আর রোজা মানে মুখের অন্যায়, চিন্তার অন্যায় থেকেও বিরত থাকা। তো আমি যদি এখন তোমার সঙ্গে গালাগালি কিংবা ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ি, তাহলে তো আমার রোজাটা আর কোরআনের রোজা হল না। তাই ভাই, তুমি যত কিছুই বল না কেন আমি আজ মুখ খুলব না। আমি রোজাদার।

আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ৬টি কাজ তোমার রোজাকে ভেঙে দেবে। মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মিথ্যা শপথ করা, গিবত করলে, কান কথা লাগিয়ে বেড়ালে এবং কামের দৃষ্টিতে অন্যের দিকে তাকালে। প্রিয় পাঠক আসুন! আমরা শুধু পেটের উপোস নয়, শরীরের উপোস, মনের উপোস, আত্মার উপোস করি। কোরআনে বলা সিয়াম পালনে করে কোরআনে আঁকা জান্নাত-উপযোগী মোমিন হওয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই মাটির দেহে সিয়ামব্রতে নূরের বাতি জ্বলে উঠবে। সায়েম হয়ে জীবন সুখে বয়ে যাবে।

Bootstrap Image Preview