Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রবাসী স্বামীকে হত্যা করে লাশের পাশেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলিত হয় হুসনা

সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০১৯, ০৮:৩৫ PM
আপডেট: ০৯ মে ২০১৯, ০৮:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


গলাকেটে সৌদি আরব প্রবাসী স্বামীকে হত্যার পর মরদেহ সেপটি ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দিয়েছেন স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক। এরপর সেই রাতেই স্বামীর ঘরেই পরকীয়া প্রেমিকের সাথে দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হন তিনি। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।

বুধবার (৮ মে) উপজেলার বাউরভাগ নূরপুর গ্রামের আব্দুল হাফিজের ছেলে সৌদি প্রবাসী মাসুক আহমদের বাড়ির বাথরুমের ট্যাংক থেকে ফারুক আহমদের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

জানা যায়, বাউরভাগ নূরপুর গ্রামের প্রবাসী ফারুক আহমদের স্ত্রী হুসনা বেগম। স্বামী ফারুক আহমদ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছেন। তিন সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়ি কানাইঘাটের নূরপুর গ্রামে বসবাস করছেন হুসনা বেগম।

স্বামী ফারুক আহমদ প্রবাসে থাকার সুযোগে একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির নছির আলী আক্কার পুত্র মোস্তফা আহমদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল ফারুক আহমদের স্ত্রী হুসনা বেগমের। বিষয়টি জানতো বাড়ির মানুষ। গ্রামেও তাদের পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে কানাকানি ছিল।

ফারুক আহমদ সৌদি আরবে থাকাকালেই পরকীয়া নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বিচার হয়। এরপরও তাদের প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি, বরং তারা একে অপরের প্রেমে আরো বেপরোয়া হয়ে যান। রাত নামলেই পরকীয়ার উদ্দাম টানে প্রেমিক মোস্তফা চলে আসতো হুসনার ঘরে। মতে উঠতো অবাধ যৌনতায়।

এ দিকে, এ অবস্থা সইতে না পেরে প্রায় দু'মাস আগে ফারুক সৌদি আরব থেকে বাড়িতে চলে আসে। এতে মোস্তফা আহমদের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে হুসনা বেগম ও ফারুক আহমদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেয়।

মোস্তফার কবল থেকে স্ত্রী হুসনাকে ফিরিয়ে আনতে নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ফারুক। পরিবারের এই বিবাদমান অবস্থার মধ্যে গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদি ফেরত প্রবাসী ফারুক। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে ফারুকের স্বজনরা স্ত্রী হুসনার সঙ্গে কথা বললেও নিখোঁজ ফারুকের ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো উত্তর দেয়নি হুসনা বেগম। বিষয়টি নিয়ে রহস্য দেখা দেয় ফারুকের পরিবারের মধ্যে। হুসনার ঘরে রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে আরও বেশী সন্দেহ দানা বাঁধে স্বজনদের মনে।

এরপর নিখোঁজ ফারুকের সন্ধান না পেয়ে মঙ্গলবার (৭ মে) বিকালে কানাইঘাট থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ফারুকের চাচা শামসুল হক।

প্রবাসী ফারুক নিখোঁজের খবর পুলিশের কাছে পৌঁছামাত্র তারা ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিহতের স্ত্রী গোরকপুর গ্রামের মৃত মসাহিদ আলীর মেয়ে ৩ সন্তানের জননী হুসনা বেগমকে মঙ্গলবার রাতে আটক করে কানাইঘাট থানায় নিয়ে আসে।

আটকের পর প্রথমে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদকালে হুসনা ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার ঘরে রক্ত কোথা থেকে এলো- এরকম প্রশ্ন করা হলে আটকে যায় হুসনা, ভেঙ্গে পড়ে সে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাতেই থানায় খুনের ঘটনা স্বীকার করে হুসনা বেগম।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ৪টায় ফারুক আহমদের লাশ সেপটি ট্যাংকিতে খুঁজে পায় পুলিশ। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বুধবার সকাল ৭টায় ফারুক আহমদের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ।

হুসনা বেগম জানিয়েছে, তার প্রেমিক মোস্তফা আহমদের সঙ্গে পরামর্শ করে সে রাতে তার স্বামী ফারুক আহমদকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ায়। ঘুমের ট্যাবলেট সেবনের পর ফারুক অচেতন হয়ে পড়লে রাতেই তার প্রেমিক মোস্তফাকে নিয়ে গলাকেটে স্বামীকে খুন করে। এবং লাশ গুম করে করতে সেপটি ট্যাংকির ভেতরে ফেলে রেখে সেই রাতেই স্বামীর ঘরে ফিরে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে মিলিত হয় হুসনা।

কানাইঘাট থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু কাওছার বলেন, ফারুক আহমদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তার স্ত্রী হোসনা বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের মোস্তফা আহমদের পরকীয়া প্রেমঘটিত কারণে হয়েছে। হুসনা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Bootstrap Image Preview