Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা সেলসম্যানের কাজ করে জিপিএ-৫ পেল বুলবুল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০১৯, ০৮:২১ PM
আপডেট: ০৯ মে ২০১৯, ০৮:২১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


'আমার বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ। মা সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু তাতে আমাদের সংসার চলে না। তাই আমি পড়াশোনার ফাঁকে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করি। এর পাশাপাশি পড়াশোনা করি। প্রতিদিন সকাল ৯টায় দোকানে যেতে হয়। রাত ৯টায় কাজ শেষ হয়। তবে বিদ্যালয়ে ক্লাস থাকলে সুযোগ দেয়া হতো। রাত ৯টার পর বাসায় ফিরে টানা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। ভোরে ঘুম থেকে জেগে আবারও বই নিয়ে বসতাম। কখনো অলসতা করতাম না।'

এভাবেই কথাগুলো জানায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত বুলবুল হোসেন (১৬)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদরের ওয়েভ সিনেপ্লেক্সের পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকে বুলবুল। তার সঙ্গে থাকে বাবা-মা। বাবা মো. খলিলুর রহমান সরদার হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। বছর খানেক ধরে কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। আগে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগীদের সিরিয়াল লিখে কিছু অর্থ রোজগার করতেন। মা আলেয়া বেগম সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু তাতে তাদের সংসার চলে না।

তাদের ছোট এই সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ মান্নার মোবাইল ফোন বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘মান্না স্মার্ট’ গ্যালারিতে সেলসম্যান পদে চাকরি নেয় বুলবুল।

বুলবুল জানায়, এসএসসির টেস্ট পরীক্ষার আগে বাবা-মা দুই জনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিকে আমার পড়ার চাপ, সেলসম্যানের চাকরি-খুব কঠিন সময় গেছে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন সব বিষয়ে প্রাইভেট পড়ে, আমি তেমন সুযোগ পাইনি। সে সক্ষমতাও ছিল না আমার পরিবারের। পড়াশোনার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে।

বুলবুল আরও জানায়, আমার অসহায় অবস্থা ও অতীতের ভালো ফলাফলের কথা জানতে পেরে সরকারি গৌরনদী কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী প্রাইভেট পড়াতেন। বিনিময় কিছু দেয়া লাগতো না। আমার স্বপ্ন মানুষের মতো মানুষ হওয়ার। এজন্য আমি ডাক্তার হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। মা-বাবা ছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্ধু এবং দোকান মালিক আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দেন, সহযোগিতা করেন।

সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. অলিউল ইসলাম বলেন, বুলবুল সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে। তবে লেখাপড়ায় কোনো সময় মনোযোগ হারাতে দেখিনি। ক্লাস ফাঁকি দিত না। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল বুলবুল। অদম্য ইচ্ছা আর নিরলস প্রচেষ্টায় দারিদ্র্য জয় করে এগিয়ে চলছে বুলবুল। পারতেই হবে, করতে হবে- এমন স্পৃহা তার মধ্যে দেখা যায়।

প্রধান শিক্ষক মো. অলিউল ইসলাম আরও বলেন, বুলবুলের উচ্চশিক্ষার জন্য বড় বাধা অর্থনৈতিক সংকট। এখন তার সহায়তা প্রয়োজন। সরকারিভাবে বা সমাজের কোনো বিত্তবান ব্যক্তি এগিয়ে এলে বুলবুলের মতো শিক্ষার্থীরা আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে।

Bootstrap Image Preview