Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইতালিতে বোন মাল্টার মর্গে ভাইয়ের লাশ, দেশে আনতে চায় না পরিবার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০১৯, ০৬:০৬ PM
আপডেট: ০৫ মে ২০১৯, ০৬:০৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে ইমরান খান ওরফে সুজন নামের এক যুবক ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড তৃষ্ণায় নৌকায় মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। তার লাশ মাল্টার সরকারি মর্গে রাখা হয়েছে। মৃত ইমরান খান ওরফে সুজন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার কেদারপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে।

জানা যায়, ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে দীর্ঘদিন পরিবারের লোকজন যখন তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না, তখন তারা ধরেই নিয়েছিলেন ইমরান আর বেঁচে নেই। কিন্তু প্রায় আট মাস পরে যখন তার মৃত্যুর খবরটি পরিবার পেলেন তখন তিনি মাল্টার মর্গে। কিন্তু এই মরদেহ দেশে ফেরাতে অতিরিক্ত খরচের কারণে লাশ দেশে আনতে চায় না তার পরিবার।

২০১৮ সালের শুরুর দিকে দালালের মাধ্যমে ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্রথমে লিবিয়ায় যান ইমরান খান। সেখানে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার পর ওই বছরের ১৬ আগস্ট ছোট একটি নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি দেন তিনি। ৮৪ জন অবৈধ শ্রমিকের সঙ্গে ছোট্ট একটি নৌকায় তুলে দেওয়া হয় তাকে। প্রায় ৫ দিন খাবার-পানি ছাড়াই উত্তাল সমুদ্রের মাঝে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রচণ্ড ক্ষুধা আর পানির তৃষ্ণায় অবশেষে নৌকাতে তার মৃত্যু হয়।

পরে সাগরে ভাসতে ভাসতে মাল্টার উপকূলে পৌঁছালে দেশটির কোস্ট গার্ড নৌকায় জীবিতদের উদ্ধার করে শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যায়। আর মৃতদের মাল্টার সরকারি মর্গে (কাস্টডি) রাখা হয়।  মাল্টায় তার লাশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে বিষয়টি দেশটিতে বসবাসরত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তারা দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ইমরান খানের লাশটিও শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

এরপর তার ঠিকানা অনুযায়ী প্রথমে যোগাযোগ করা হয় ইমরানের ইতালি প্রবাসী বোনের সঙ্গে। কিন্তু একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে বাংলাদেশে তার ভাই শোভন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা খরচের অজুহাত দেখিয়ে ইমরানের লাশ দেশে আনতে রাজি হননি।

ইউরোস্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর ইউরোপে ঢুকছে প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যাদের বড় একটি অংশ এই নৌকা ডুবে মাঝ সাগরে প্রাণ হারান। পরে তাদের মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন দেশে জটিলতা তৈরি হয়। অনেকের সন্ধান জানা গেলেও খরচের কারণে তাদের পরিবার মরদেহ দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানান।

এই বিষয়ে মাল্টার আওয়ামী লীগ নেতারা জানায়, ইমরানের লাশটি দেশে পাঠাতে হলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি তার লাশ দেশে পাঠানোর জন্য। ইতিমধ্যে সকল প্রক্রিয়া শেষ করেছি। এ মাসের মধ্যেই ইমরান খানের লাশটি বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা আরও জানায়, দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় মরদেহ পাঠানোর প্রক্রিয়া বেশ জটিল। মাল্টায় দূতাবাস থাকলে ইমরান খানের মরদেহ দেশে পাঠাতে এত ভোগান্তি হতো না। মাল্টার সকল কার্যক্রম গ্রিস থেকে সম্পন্ন হয় বলে এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া।

প্রসঙ্গত, শুধু ইমরান খান নয়, তার মতো হাজারো বেকার যুবক পাড়ি দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর পথ। কিন্তু এ পথ যে মোটেও সহজ নয়, তা তারা হয়তো জেনে পাড়ি দিচ্ছেন আবার অনেকেই না জেনে দিচ্ছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৬ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন। এভাবে সাগরপথে আসতে গিয়ে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ প্রাণও হারিয়েছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে বাংলাদেশি।

Bootstrap Image Preview