লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক ঘূর্ণিঝড় ফণীর খোঁজখবর রাখছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করছেন।
শুক্রবার (৩ মে) প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সরকারের সব সংস্থা এবং বেসরকারি সংগঠনগুলোকে সুসমন্বিতভাবে ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশনা মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলারও সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য আঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতে চলছে ফণীর তাণ্ডব। দেশটির উত্তর প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বজ্রপাতে ও গাছ উপড়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ঘূর্ণিঝড় ফণী।
ফণীর প্রাথমিক তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পশ্চিম মেদিনীপুর শহরের একাংশ তছনছ হয়ে পড়েছে। ২৪ পরগনায় তীব্র বাতাসের সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে একটি বাড়ি।
এরই মধ্যে ফণীর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন পার্শ্ববর্তী নিরাপদ স্থানে।
শুক্রবার (০৩ মে) সকাল থেকে বলেশ্বর নদীর পানি বাড়তে থাকে। স্রোতের চাপে উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ ফোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙে বগী, সাতঘর এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে সন্তান-সন্ততি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
এ দিকে ফণীর প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল। তবে মেঘের আড়ালে সূর্যও উঁকি দিচ্ছিল। তবে সকাল ১০টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি।
রাজধানীজুড়ে থেমে থেমে চলছে এই বৃষ্টি। কখনও প্রবল্ভাবে কখনও ধীরে ধীরে হচ্ছে বৃষ্টি। বেলা সাড়ে ৩টার পর থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ আপডেটে জানানো হয়, বাংলাদেশের খুলনা এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত করতে পারে। এসময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে। ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বনিম্ন গতিবেগ থাকবে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার।
এর আগে সবশেষ আপডেট জানানো হয়েছিল দুপুর ১২টায়। সে সময়ে জানানো হয় মধ্যরাতে বাংলাদেশে আঘাত হানবে ফণী।
এর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বজ্রপাতে ও গাছ উপড়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশে আট জন ও উড়িষ্যায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশকিছু স্থানে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাতিল করা হয়েছে অনেক ফ্লাইট ও ট্রেন সূচি।
বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর প্রদেশের চান্দাওলিতে জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে চার ব্যক্তির। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরো পাঁচ জন। একই জেলায় গাছ উপড়ে প্রাণহানি ঘটেছে এক বৃদ্ধার।
একই রাতে সোনেভারদা জেলার পান্নুগঞ্জে বজ্রপাতে মারা যান এক তরুণ। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় দুই ভাই। তাদের পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।
বলা হচ্ছে, ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। এই ঝড়ে প্রায় ১০ হাজার গ্রাম ও ৫০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে।