Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঢাকায় পাহাড়ি নারীদের রেস্তোরাঁ ‘হেবাং’

নারী ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৯, ০৮:১৫ PM
আপডেট: ০২ মে ২০১৯, ০৮:১৫ PM

bdmorning Image Preview


কংক্রিটের ভবনেই রেস্তোরাঁটি। তবে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে ভিন্ন পরিবেশ। প্রথমেই চোখ আটকাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট ঘরে। দেয়ালের গায়েও বাঁশের নানা কারুকাজ। বাঁশের এত ব্যবহার হবে নাইবা কেন? এ যে পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ।

রাজধানী ঢাকার কংক্রিটের পাহাড়ে আসল পাহাড়ের রূপ আনতেই বাঁশের এই প্রাধান্য, জানান রেস্তোরাঁর পরিচালনাকারীরা। এখানে যে ঘরের কথা বলা হচ্ছে, চাকমা ভাষায় এর নাম ইজর। এটা পাহাড়িদের প্রথাগত ঘরের বাইরের অংশ। যেখানে বসে মানুষ সময় কাটায়।

নগরবাসী যেন বসে পাহাড়ি খাবার খেতে খেতে সময় কাটতে পারে, সে ব্যবস্থাই আছে এখানে। রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ার এ রেস্তোরাঁর নাম ‘হেবাং’। কাজীপাড়ার পদচারী–সেতুটির উত্তর দিকের একটি ভবনের তিনতলায় এর অবস্থান। হেবাং নারী পরিচালিত প্রথম পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ। চার বোন এর পরিচালনায় আছেন। রেস্তোরাঁ চালুর আগে ২০১৬ সাল থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে পাহাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করত হেবাং।

চার বোনের একজন সুচিন্তা চাকমা বললেন, ‘অনলাইনে এত সাড়া দেখেই এ রেস্তোরাঁ খোলা। এখনো ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ গত ১৬ ডিসেম্বর চালু হয় হেবাং। অনলাইনে পাহাড়ি খাবার সরবরাহের বা আজকের রেস্তোরাঁ—দুটির চিন্তাই আসে চার বোনের মধ্যে দ্বিতীয় প্রিয়াঙ্কা চাকমার মাথা থেকে। হেবাংয়ের জায়গায় মেজাং নামে পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ ছিল। মেজাং বিক্রি করে দিলে কিনে নিয়ে হয় ‘হেবাং’—চাকমা ভাষায় যার অর্থ ভাপে রান্না করা খাবার। এ রান্নার একটি বৈশিষ্ট্যই হলো সেদ্ধ বা ভাপে রান্না।

বাঁশের ভেতরে মুরগি বা অন্য মাংস দিয়ে সেই বাঁশ পুড়িয়ে রান্না করা খাবার বেশ জনপ্রিয়। ‘সুমোত দি তোন’ নামের এ খাবার এখানে নিয়মিত মেলে। জুমের বিন্নি চালের ভাতের সঙ্গে নানা পাহাড়ি তরকারির মিশ্রণ ‘পাজন’ও পাওয়া যায় নিত্যদিন। পাহাড়িদের বর্ষবিদায় ও বরণের উৎসব বৈসাবিতে পাজন অপরিহার্য, এটি পাওয়া যায় প্রতিদিন। আছে শুঁটকির নানা আইটেম।

ছোট শামুক বা শীতের সময়ে সেদ্ধ বাঁধাকপির সঙ্গে ঝালের মিশ্রণ। মিরপুর কাজীপাড়ার পাহাড়ি নারীদের রেস্তোরাঁ হেবাংয়ের ভেতরের অংশ। ছবি: সংগৃহীত মিরপুর কাজীপাড়ার পাহাড়ি নারীদের রেস্তোরাঁ হেবাংয়ের ভেতরের অংশ।

খাবারের মধ্যে দেখা গেল হাঁস, বেলে মাছ, কাঁকড়ার নানা পদ। ব্রয়লার মুরগি আছে। তবে পাহাড়ের বনমোরগও পাওয়া যায়। বর্ষার দিনে বাঁশ কোড়ল দিয়ে তৈরি নানা পদ থাকে। কোড়লের মধ্যে মুরগির মাংস ঢুকিয়ে ‘বাচ্চুরিমালা’ তো বিখ্যাত। দুপুর ও রাতের খাবারের বিভিন্ন পদের সঙ্গে আছে নানা পাহাড়ি পিঠা।

বিন্নি চালের পিঠা, কলা পিঠা গরম-গরম পরিবেশিত হচ্ছে। আছে নানা ফলের জুস। তিন থেকে চার ধরনের চা আছে। এর মধ্যে তেঁতুল চা, পুদিনাপাতার চা, রোজেলা চা অন্যতম। চার বোনের মধ্যে বড় বিপলী চাকমা বললেন, ‘পাহাড়ের জুমে হওয়া টক ফল আমিল্যার পাতা শুকিয়ে তৈরি রোজেলা চা আমাদের নিজেদের আবিষ্কার।’ চার বোনের মাধ্যমে জানা গেল, জন্মদিন বা কোনো পার্টি করতে চাইলে দুপুরের জন্য বেলা ১১টার মধ্যে আর রাতের খাবারের জন্য বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে অর্ডার দিতে হবে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় হেবাং খোলে, চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। রেস্তোরাঁটি পাহাড়ি খাবারের হলেও এখানে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ শতাংশর বেশি বাঙালি। রেস্তোরাঁয় ঘণ্টা দেড়েক বসে দেখা গেল, আটজন ভোক্তার মধ্যে পাঁচজনই বাঙালি। তাঁদের মধ্যে প্রথমবার আসা ডোনাল্ড এইচ খান আর তাঁর বন্ধু ডেলা জানালেন, তেলহীন খাবার আর ভিন্ন পরিবেশ তাঁদের মুগ্ধ করেছে। হেবাংয়ে শব্দযন্ত্রে ধীরলয়ে বাজে পাহাড়ি নানা ভাষার গান। বিভিন্ন দিবসে এখানে গানের আসরও বসে।

চার বোনের একজন প্রিয়াঙ্কা বলছিলেন, ‘এ রেস্তোরাঁ আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিঃসন্দেহে। তবে খাবার, পরিবেশ, পরিবেশনা—সবকিছুর মধ্যে পাহাড়কে তুলে ধরতে চাই। নিজেদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে অন্যকে জানাতে চাই।’ হেবাংয়ে পরিবেশিত হয় এমন নানা পাহাড়ি পদের খাবার। 

Bootstrap Image Preview