Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশ মেডিকেলের আইসিইউ'র বেহাল চিত্র নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় সাংবাদিক লাঞ্ছিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৩৮ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক


বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে অনিয়মের উপরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পরিচালকের কাছে তথ্য জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিককে চাদাঁবাজ বলে হুমকি ও আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। এছাড়াও সাংবাদিককে কোনো প্রকার লিখিত অভিযোগ ছাড়াই ধানমন্ডি থানায় এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।

এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে দুপুর ১টা ৪৫মিনিটের দিকে বিডিমর্নিং-এর অনুসন্ধানী সংবাদিকের গোপন ক্যামেরায় ধরা পরে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ধানমন্ডি) আইসিইউতে দুই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রবেশের চিত্র এবং বের হওয়ার সময় গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীকে ফ্রি’তে ঔষধ দিয়ে যাওয়ার চিত্র।

আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র হাসপাতালের একটি বিশেষায়িত বিভাগ।এখানে গেটের ওপরে লেখা থাকে - ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’। কারণ এখানে  চিকিৎসাধীন প্রতিটি রোগী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকেন। ফলে তাদের নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর এমন বেহাল চিত্র নিয়ে  গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০০৩ সাল থেকে (১৬ বছর) এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিনি এবং বেশিরভাগ সময় তিনি এখানেই দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নাম আসাদুজ্জামান, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর।

মাত্র ভিতরে কারা প্রবেশ করেছিল জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই দুইজন ঔষধ রিপ্রেজেন্টেটিভ।

এসময় তিনি আরো জানান, বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখানে প্রতিনিয়ত আসেন(আইসিইউ) ও ভিতরে গিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করেন। তাদের জন্য দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

আপনাকে কি ঔষধ দিয়ে গিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যালসিয়াম ঔষধ চেয়েছিলাম সেটা দিয়ে গেলেন।

পরে ভিতরে প্রবেশ করা ঔষধ রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা একমি ফারমাসিউটিক্যালে কাজ করছেন। একজন জানান তাঁর নাম মাইনুল এবং তাঁর নাম্বার পাওয়া যায় (০১৭৫৫৫৫০৪৪৭)।

এই ঘটনার পর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের আইসিইউসহ গোটা হাসপাতালের ওপর নজর রেখে দেখা যায়, বিভিন্ন ঔষধ প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিভ যেকোনো সময় মেডিকেলে প্রবেশ করছেন এবং ডাক্তারের সাথে দেখা করছেন।

আইসিইউতে ঔষধ রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রবেশ করতে পারবে কি না এবং একটি আর্দশ আইসিইউ’র কি কি দিকে খেয়াল রাখতে হবে, এসব বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ মেডিকেলের পরিচালক সবুর মিয়ার কাছে গেলে বিডিমর্নিং সাংবাদিক ইসতিয়াক ইসতির সাথে রাগান্বিত স্বরে কথা বলা শুরু করে এবং সাংবাদিক তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে এসেছে বলে চিল্লাতে শুরু করে।

এরপরই তাঁর পিএ টু ডিজি বলেন, পুলিশকে ফোন দিয়েছি। তারা আসলে আমি বলবো, আপনি চাঁদাবাজি করতে এসেছেন।

এসময় বিডিমর্নিং-এর সাংবাদিকের গোপন ক্যামেরা ওপেন থাকায় গোটা বিষয়টি (ভিডিও) ধারণ করা সম্ভব হয়।

যা ঘটেছে পরিচালকের কক্ষে-

বিডিমর্নিং এর অনুসন্ধানী সাংবাদিক দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশ মেডিকেলের পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করেন। তাঁর পরে পরিচালক বরাবর প্রশ্ন করেন ‘স্যার একটি আর্দশ আইসিইউ কেমন হতে পারে আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি? কারণ আপনি বাংলাদেশ মেডিকেলের দায়িত্বে আছেন, আপনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তাঁর পরে আমি আমার পরবর্তী প্রশ্নে যাব'।

তখন তিনি বলেন, ‘আর কি কি প্রশ্ন আছে একবারে শেষ করেন’

বিডিমর্নিং এর সাংবাদিক বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে দেখতে পেয়েছি বাংলাদেশ মেডিকেলের আইসিইউতে একমি কোম্পানির  মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রবেশ করে ডাক্তারের সাথে দেখা করেছেন। এটা তো সংবেদনশীল জায়গা। এখানে তো আমাদের যাদের লোকভর্তি থাকে তারাই প্রবেশ করতে পারি না। কিন্তু সে আইসিইউর গেটে দায়িত্বে থাকা কর্মীর হাতে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে’।

এসময় বিডিমর্নিং এর সাংবাদিক তাঁর কাছে থাকা কিছু দালিলিক প্রমাণ দেখান। তা দেখে তিনি বলেন,  'আপনি প্রথমে কেন আসেন নাই। কেন আপনি ছবি তুলে নিয়ে এসেছেন ?'

সাংবাদিক ইসতিয়াক ইসতি বলেন, ‘আমি তো এই কারণে এখন আসলাম’।

পরিচালক বলেন, ‘আপনি আমার কাছে জানতে চাচ্ছেন আদর্শ আইসিইউ কি?  আপনি একটা মেডিকেল হেডকে এভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না। আপনি আমার কাছে কেন আগে আসেননি।’

এসময় পরিচালক বলেন, ‘আপনি আগে না এসে নিউজ প্রকাশ করে কেন এখন এসেছেন?’

উত্তরে বিডিমর্নিং-এর সাংবাদিক বলেন, আমি কিন্তু এখনো সংবাদ প্রকাশ করিনি । প্রকাশের আগে আপনার ইন্টারভিউ নিতে এসেছি।

সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেলের পরিচালক বলেন, ‘আপনার যা ইচ্ছা করেন আমার কিছু যায় আসে না। আমি আপনার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিব। আপনি কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়া এই কাজ করেছেন(গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তোলার বিষয়টি বুঝিয়েছেন)।

সাংবাদিক বলেন, ‘আমি কি করেছি আপনার অনুমতি ছাড়া?’

তখন তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল  করতে এসেছেন’। তখন তিনি তাঁর অধীনস্থ কর্মকতাকে পুলিশকে ফোন দিতে বলেন।

এসময় বিডিমর্নিং-এর এই প্রতিবেদক তাঁর সাথে আগে কোনদিন দেখা করেছেন কিনা তা বাংলাদেশ মেডিকেলের পরিচালক জানতে চায়।

উত্তরে সাংবাদিক বলেন, ‘না আমি এর আগে আপনার সাথে দেখা করি নাই’।

পরিচালক তখন বলেন, ‘তাহলে না দেখা করাই হচ্ছে আপনার ক্রাইম’।

তখন তিনি আবার পিএ টু ডিজিকে ডেকে থানায় মামলা করতে বলেন। এসময় পিএটু ডিজি লতিফ বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলবো আপনি আমাদের কাছে চাঁদা চেয়েছেন। তারপরে আপনাকে জেলে দিব’।

বিডিমর্নিং-এর সাংবাদিক পরিচালকের সামনেই পিএ টু ডিজিকে প্রশ্ন করে, ‘আপনি যে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি আপনার কাছে চাঁদা চেয়েছি ? আমি কি আপনার কাছে কোনো প্রকার টাকা চেয়েছি’?

তখন তিনি বলেন, ‘আসলে আপনি আমার স্যারকে প্রশ্ন করেছেন। তাই আমি বলেছি আপনি চাঁদাবাজি করতে এসেছেন’।

এসময় পরিচালক বলেন, ‘আপনি সাদা কাগজে একটা দরখাস্ত লিখে আমার কাছে জমা দিয়ে যান। আমি এ বিষয়ে দেখবো।

পরে বিডিমর্নিং এর সাংবাদিক ‘আইসিইউতে অনিয়মের বিষয়ে জানানো’ এই মর্মে একটা দরখাস্ত জমা দেয়।

এসময় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা ডাক্তার প্রফেসর আশরাফ পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় পরিচালক বিডিমর্নিং সাংবাদিকের দেওয়া দালিলিক প্রমাণে স্বাক্ষর করে আর সহকারীকে বলেন, ‘দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক’।

আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা ডাক্তার প্রফেসর আশরাফ

এসময় আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা প্রফেসর আশরাফ বলেন, ‘আপনার সমস্যা কি? মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আসবেই। তারা আইসিইউতেও যাবে। আপনার সমস্যা কি? আপনি তো তিলকে তাল করে ফেলছেন। আপনাদের বড় বড় সাংবাদিকরা আমাদের সাথে কথা বলেন’।

এসময় ধানমন্ডি থানার দুই জন পুলিশ পরিচালকের কক্ষে উপস্থিত হয়। যাদের একজন হচ্ছেন নূর ই আলম। যিনি বারবার সাংবাদিককে বাংলাদেশ মেডিকেলের পরিচালকের সাথে সমঝোতা করতে বলেন। আর তিনি নিজেকে সাবেক সংবাদ কর্মী বলে দাবি করে বিডিমর্নিং-এর প্রতিবেদককে সাংবাদিকতার নীতিমালা শিখাবার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে কোনো প্রকার লিখিত অভিযোগ ছাড়াই সাংবাদিককে নিয়ে যায় এবং পরে বিডিমর্নিং এর সহকারী সম্পাদক শাহরিয়ার নিশানের সাথে বাইরে বসে সমঝোতা করতে চায়।

কিন্তু তারা তাঁর কথায় বিরোধিতা করলে বিডিমর্নিং-এর সাংবাদিক ইসতিয়াক ইসতির কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ, বাইকের চাবি নিয়ে থানায় বসিয়ে রাখেন। পরে সে কোনো কিছুর প্রমাণ না খুঁজে পেয়ে বিডিমর্নিং সাংবাদিককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিমর্নিং-এর সাংবাদিক ইসতিয়াক ইসতিকে আমরা থানায় নিয়ে আসি। কিন্তু পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ না করায় আমরা তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

Bootstrap Image Preview