Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কালীগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

সোহেল আহমেদ খান, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৩৬ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের ইচ্ছা মত ভর্তি বাণিজ্য, সহকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অতিরিক্ত ভর্তি ফি, অনিয়মিত উপস্থিতি, নিজের ইচ্ছা মত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ, ভিন্ন অজুহাতে বেতনের সাথে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম আর অব্যস্থাপনায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের তত্ত্বাবধানে চলছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি।  

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ জুন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাশিদা বেগমের বদলি হয়। পরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. এরশাদুল্লাহ চলতি দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মো. আব্দুল আহেদ যোগদান করেন।

পরে নিয়মানুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বিদ্যালয়ে চলতে থাকে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা। 

সরকারি নিয়মানুযায়ী বছরের শুরুতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আহেদ। তিনি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মার্চের শেষের দিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এক ছাত্রীকে ভর্তি করান।

এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষক অনিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত থাকতেন এবং ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও উত্যক্ত করতেন। এনিয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা কথা বললে তাদের সাথে করতেন অসৌজন্যমূলক আচরণ। বিদ্যালয়ের সৃষ্ট ১২ শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়া চাহিদানুযায়ী ১১ জন শিক্ষকই ছিলেন। তারপরও নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ইচ্ছে মত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।

পরে সেই অতিথি শিক্ষকের নিয়োগ দেখিয়ে প্রতি ছাত্রীদের কাছ থেকে ২'শ টাকা করে অতিরিক্ত বেতন আদায় করতেন। যা এপ্রিল মাসের শুরুতে আদায় করা হয়।      

অন্যদিকে, সরকারি নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদ। ওই শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১'শ জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ওই সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৭'শ ৫০ টাকা ভর্তি ফি নেওয়া হয়।

একই শিক্ষাবর্ষে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ফি। ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে ১ হাজার ৭'শ ৩৫, ৯ম ও ১০ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কাছে ১ হাজার ৭'শ ৯৫ টাকা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিতে বিদ্যালয়ের চত্ত্বরে কোচিং বাণিজ্য করে যাচ্ছে ওই প্রধান শিক্ষক। কৌশল করে যার নামকরণ করা হয়েছে বিশেষ ক্লাস।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাস নামে একটি কর্মসূচি শুরু করতে চায়। যাতে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়। আর এর ফি ধার্য্য করা হয় মাসে শিক্ষার্থী প্রতি ১,৫০০ টাকা। কিন্তু অভিভাককদের চাপের মুখে ওই সময় বিশেষ ক্লাস বন্ধ রাখলেও পরে যে কোন দিন শুরুর সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এজন্য ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের ধারণা সরকারি নিয়মনীতি নয়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের নিয়মেই চলছে বিদ্যালয়টি।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের মুঠোফোনে কল দিয়ে পরিচয় দিলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ না করে কেটে দেন।  

কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর-ই-জান্নাত বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে যেহেতু জেনেছেন বিষয়টি তিনি দেখবেন বলেও জানান। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শিবলী সাদিক বলেন, সরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।    

 


 

Bootstrap Image Preview