আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের স্বপ্ন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা। কারো কারো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফলের পর বাইরে থেকে একটি ডিগ্রি নিয়ে আসার পরিকল্পনায় থাকেন। কেউ হয়তো শিক্ষকতা করতে চায় বলে, আবার অনেকে বাইরের দেশের পড়াশোনা, সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা প্রায় বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলেও দেশের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজ খরচে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার স্বপ্ন রয়ে যায়।
দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বৃত্তির ঘোষণা দেয়, বিভিন্ন দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট কিংবা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে এই বৃত্তির তথ্য। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও নিয়মিত বিভিন্ন দেশের বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
এছাড়া বাইরের দেশের নিজস্ব বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা থাকে যার মধ্যে দিয়ে তারা ভিনদেশী স্টুডেন্টদের উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি তাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করাতে চায়। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ করতে আছে অনেক ঝামেলা। ভালো প্রস্তুতির পাশে টোফেল, আইএলটিএস এবং অন্য ভাষার প্রয়োজনীয়তা। বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি একটু ইন্টারনেটে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে ঘাটাঘাটা করে কিছু বিষয় গুছিয়ে নিতে পারেন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি: * প্রথম প্রস্তুতি হতে পারে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা। কারণ, কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল নয় সত্যিকার শিক্ষাটা কাজে আসবে এখানে। ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে। তবে চীন, জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স এসব দেশে যেতে চাইলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে নেয়া ভালো।
* GRE, SAT, GMAT এবং IELTS বা TOFEL-এ ভালো স্কোর না থাকলে বিদেশে পড়াশোনার চেষ্টা করে লাভ নেই। বিশেষত বৃত্তি যে মিলবে না এটা নিশ্চিত।
* কোন এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইলে আগে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া উচিত।
* পাসপোর্টে যাতে কোন সমস্যা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হওয়া দরকার।
সঠিক কোর্স নির্ধারণ: পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোন ধরনের পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত তা খোঁজে বের করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পেশাগত সফলতা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সেই পেশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তাই বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে উচ্চশিক্ষার অনেক কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটি কোর্স বেছে নিতে হবে যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে গণ্য হবে।
তা ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি একেবারে একটি নতুন বিষয়ও বেছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গুরত্বপূর্ণ এবং চাহিদা সম্পন্ন এ রকম কোন বিষয়কেও আপনি পছন্দ করতে পারেন। তবে সাধারণত বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশও যথেষ্ট চাহিদা আছে এরকম কোন কোর্সকে উচ্চশিক্ষার নির্বাচন করাই শ্রেয়।
উপযুক্ত কোর্স নির্বাচনে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত:- * আপনি পেশাগত জীবনে কোন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং সে অনুযায়ী আপনার বর্তমান যোগ্যতা সাপেক্ষে কোন কোর্সটি সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে হয়?
* উক্ত কোর্সের কোন বিকল্প কোর্স আছে কি না?
* আপনি যে দেশে পড়তে যেতে আগ্রহী সে দেশে উক্ত কোর্সে উচ্চশিক্ষার মান বা পদ্ধতি বিশ্বে কতোটুকু গ্রহণযোগ্য বা সময়োপযোগী।
*কাঙ্ক্ষিত কোর্সটিতে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলবেন এবং সেখানে এর সুবিধা বা সম্ভাবনা ও অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতটুকু?
* উক্ত কোর্সে পড়াশোনাকালীন সময়ে কোন আর্থিক সহায়তা বা বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে কিনা; যদি থাকে, তবে কি ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে এবং আপনি কতটুকু পূরণ করতে সক্ষম হবেন?
*উক্ত কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এরকম কোন বিদেশি বা দেশী শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ করে নিতে পারেন।
দেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গভীরভাবে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ প্রতিটি দেশে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা এক রকম নয়। যেমন- কোন দেশে টিউশন ফি বেশি, কোন দেশে কম, আবার টিউশন ফি আদৌ লাগে না আবার কোন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই মানের কোর্সের মেয়াদ কম, কোন দেশে আবার বেশি। কোথাও পার্ট টাইম জব করা যায়, কোথাও পার্টটাইম জব হয়তো পাওয়া যায় না, আবার কোথাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন দেশে সহজেই স্কলারশিপ পাওয়া যায়, আবার কোন কোন দেশে স্কলারশিপ পাওয়া বেশ কঠিন। কোন দেশের আবহাওয়া খুবই বিরূপ, আবার কোন দেশের আবহাওয়া নান্দনিক ও স্বাস্থ্যকর। আবার এমনও দেশ আছে যেখানে পড়াশোনাকালীন সময়েই নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং সবকিছু সুক্ষ্মাতিসুক্ষ বিশ্লেষণ করে, সময় নিয়ে ভেবে-চিন্তে তবেই দেশ নির্বাচন করুন।
এক্ষেত্রে ওয়েব সাইটে প্রদত্ত দেশগুলো সম্পর্কে সর্বোচ্চ সংখ্যক তথ্য দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত কেউ যারা ঐ দেশে থাকেন বা ঐ দেশে সম্পর্কে ভালো জানেন, আপনার উচিত তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করা। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি দেশেরই বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব সরকারি ওয়েব সাইট আছে। যদি আপনার জানা না থাকে তবে Google বা Yahoo- এ রকম সার্চ ইঞ্জিন এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটগুলো খুঁজে নিয়ে ভিজিট করুন এবং সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খরচ, স্কলারশিপ তথ্য, আবাসন ব্যবস্থা, জীবনধারা, আবহাওয়া, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর উপযুক্ত দেশ নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে দু-তিনটি দেশ নির্বাচন করা ভাল। কারণ একটি মাত্র দেশ পছন্দ করলে সেখানকার কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও ভিসা পেতে ব্যর্থ হতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার বিদেশে যাত্রা অন্তত এক শিক্ষাবর্ষের জন্য পিছিয়ে যাবে।
দেশ নির্বাচনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বেশ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করুন। কারণ আর কিছুই না, অধিক পরিমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শর্তগুলো জেনে নিয়ে আপনার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে সহজ হবে। আর ২/১ টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করলে হয়তো দেখা যাবে তাদের শর্তগুলো পালন করে সেখানে ভর্তি হওয়া বা পড়াশোনা করা আপনার জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন অথবা অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভবও হতে পারে। তাই কমপক্ষে ৮/১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করে তাদের বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করুন এবং এক্ষেত্রে যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে সেগুলো হলো:-
আপনার পছন্দকৃত বিষয় আছে কি না?
পড়াশোনার মান কেমন?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান কোথায়?
লেখাপড়ার ও অন্যান্য খরচ কত এবং পরিশোধের পদ্ধতি কেমন?
স্কলারশিপ সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার সম্ভাবনা আছে কি না?
আবাসন ব্যবস্থা?
ভর্তি যোগ্যতা ইত্যাদি।
শিক্ষার্থিদের বিশেষ করে খরচের ব্যাপারটা ভালভাবে মাথায় রাখা উচিত। এক্ষেত্রে যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবেন তাদেরকে যে বিষয়গুলো ভাবতে হবে-স্কলারশিপের মেয়াদ কত এবং নবায়ন করা যাবে কিনা, যদি যায় তবে কি ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে?
স্কলারশিপের অর্থে কি কি খরচ করা যাবে?
সেখানকার জীবনযাত্রা কেমন ব্যয় বহুল এবং আপনার পক্ষে স্কলারশিপের অর্থে তা নির্বাহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না?
যারা নিজ খরচে পড়াশোনা করতে যাবেন তাদের যে বিষয়গুলো ভাবতে হবে; আপনার পছন্দের কোর্সটিতে সর্বমোট খরচ কত এবং কিভাবে পরিশোধ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করলে তারা মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জানিয়ে দেবে। এতে যে বিষয়গুলো সাধারণত অন্তর্ভূক্ত থাকবে সেগুলো হলো- টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইন্স্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি। খরচগুলো কমানোর কোন বিকল্প উপায় আছে কিনা। যেমন- অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে না থেকে কোন পরিবারের সাথে থাকলে খরচ কম লাগে। আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ সেমিস্টারের টিউশন ফি একসাথে দিলে কিছুটা কমিশন বা ছাড় পাওয়া যায়। আর্থিক সহায়তা, ঋণ বা স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। যদি থাকে তবে কি যোগ্যতার ভিত্তিতে। দেশটির জীবনযাত্রা কেমন ব্যয়বহুল এবং আপনার পক্ষে তা নির্বাহ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না।
প্রয়োজনীয় কাগপত্র তৈরি: বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই একাডেমিক কাগজপত্রসহ যাবতীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করার ব্যাপারে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সকল কাগজপত্র ইংরেজি ভাষায় হতে হবে। ইদানিং বোর্ড বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই পরীক্ষা সনদপত্র বা নম্বরপত্রগুলো ইংরেজিতে প্রদান করা হচ্ছে। তবে যে সব কাগজপত্র ইংরেজিতে করা নেই সে সব অনুবাদ করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে দু’ভাবে অনুবাদ করা যায়। বোর্ডের একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদপত্র ও নাম্বারপত্রের অনুবাদ কপি তোলা যায়। তবে পূর্বের মূল কপি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে। এটাই হচ্ছে সনদপত্র ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের উত্তম পদ্ধতি। তবে একটু সময় বেশি লাগে বলে আপনি ইচ্ছে করলে নোটারী পাবলিক থেকেও অনুবাদ করাতে পারেন। এক্ষেত্রে পূর্বের মূলকপি এবং অনুবাদকৃত কপি একসাথে রাখতে হয়।
উল্লেখ্য যে, ছবি এবং প্রয়োজনীয় সকল ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সকল কাগজপত্রের মূল কপি দেখানো সাপেক্ষে বিনামূল্যে সত্যায়িত করা যায়। এছাড়া নোটারী পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়।
আবেদন এবং ভর্তি প্রসেসিং: নির্দিষ্ট দেশের বাছাইকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রথমে ভর্তি তথ্য, প্রসপেক্টাস ও ভর্তি ফরম চেয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র কুরিয়ার যোগে, ফ্যাক্স বা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যায়। তবে ই-মেইলে পাঠানো ভালো। আবেদনপত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছালে তারা আপনার ঠিকানায় ভর্তির আবেদন ফরম ও প্রসপেক্টাস পাঠিয়ে দিবে। এতে সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আপনার ই-মেইল আড্রেস দিলে সেখানেও আবেদন ফরম দিতে পারে। আবার কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েব সাইটে আবেদন ফরম দিয়ে থেকে। এক্ষেত্রে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর আবেদন ফরমটি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে পূরণ করে প্রসপেক্টাসের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ও আবেদন ফি/ব্যাংক ড্রাফট কোন আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস বা রাষ্ট্রীয় ডাকের মাধ্যমে নির্দেশিত ঠিকানায় পাঠাতে হবে।
আবেদন ফি অফেরতযোগ্য। আর হ্যাঁ, মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন প্রকার অসত্য তথ্য দিলে ভর্তি অনিশ্চিত বা পরবর্তিতে বাতিলের সম্ভাবনা থাকে এবং ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া ফরম পূরণের সময় কাটাকাটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ফরমটি ফটোকপি করে আগে ফটোকপি পূরণ করুন এবং পরবর্তীতে সেটা দেখে মূল ফরমটি পূরণ করুন।
আবেদনপত্রের সাথে সাধারণত যেসব কাগজপত্র পাঠাতে হয়- ১. সকল একাডেমিক কাগজপত্রঃ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা তদূর্ধ্ব সকল সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং সাবেক বা বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশপত্র।
২. ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্রঃ নির্বাচিত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী যে ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে সে ভাষায় দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ ভাষা শিক্ষা কোর্সের সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
৩. উল্লেখ্য যে, ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ক্ষেত্রে যদি সে দেশে গিয়ে চান তবে তার পূর্বতন ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ স্বরূপI ELTS/TOFEL এর সনদপত্রের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হবে। তবে কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার সনদপত্র লাগে না।
৪.আর্থিক সামর্থের প্রমাণপত্রঃ যিনি আপনার বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ বহন করবেন তার অঙ্গীকারপত্র, আর্থিক সামর্থের প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
নিজ খরচে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থের প্রমাণস্বরূপ স্পন্সরের নামে দেশভেদে বিভিন্ন অংকের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং অনেক ক্ষেত্রে এ সলভেন্সি সার্টিফিকেট এর বৈধতার পক্ষে বিগত ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেন রিপোর্টের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়।
৫. আবেদন ফি'র ব্যাংক ড্রাফটঃ দেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে আবেদন ফি বাবদ ৭০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট পাঠাতে হয়।
ভর্তির অনুমতিপত্র পাওয়ার পর করণীয়: ভর্তির অনুমতিপত্র বা অফার লেটার পাওয়ার পর সাধারণত অফার লেটারে বা প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত টিউশন ফির সমপরিমাণ অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে যা ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় দূতাবাসে দেখাতে হয় এবং ভিসা পেলে পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু টিউশন ফি বা এ রকম বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যাংক ড্রাফট করতে হলে ব্যাংকে নিজের নামে একটি স্টুডেন্ট ফাইল চালু করতে হবে এবং সেখান থেকেই বিদেশে পড়াশোনাকালীন সকল আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করা যাবে। ব্যাংকে
স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র লাগে সেগুলো হল :- ১। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসপেক্টাস বা ভর্তির প্রমাণপত্র বা ভর্তি ফরম
২। পাসপোর্ট
৩। শিক্ষাগত সনদপত্র
৪। পুলিশ ছাডপত্র এবং
৫। ছবি
বি. দ্র. বিভিন্ন ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় শাখাগুলোতে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য আলাদা কেন্দ্র রয়েছে।
জেনিফার কামাল: প্রভাষক, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ