Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

জীবন বাঁচাতে শ্রীলঙ্কার শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন মুসলমানরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪০ PM
আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪০ PM

bdmorning Image Preview


হুমকির মুখে জীবন বাঁচাতে শ্রীলঙ্কার পশ্চিম উপকূলীয় শহর নেগোম্বো থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন মুসলমানরা। গত রবিবার নেগোম্বো শহরের সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় জঙ্গি হামলার জেরে এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। শহরটির খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকায় শতশত মুসলমান সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন।

বুধবার শতশত পাকিস্তানি মুসলমান শ্রীলঙ্কার এই বহুজাতিক বন্দরনগরী নেগোম্বা থেকে পালিয়ে গেছেন। স্থানীয়রা মুসলমানদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিলে মুসলমানরা পালাতে শুরু করেন।

বাসে চড়ে পালানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আদনান আলি নামের এক পাকিস্তানি মুসলমান ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এখানকার গির্জায় বোমা হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। কিন্তু আমরা এখন কোথায় যাবো তা আমরা এখনো জানি না।’ রবিবারের হামলার পর তারা আবারও গৃহহীন হয়ে পড়লেন।

ফারাহ জামিল নামের এক পাকিস্তানি আহমদিয়া মুসলমান জানান, তাকে তার বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। ফারাহ বলেন, “আমার বাড়িওয়ালা আমাকে বলেন, ‘এখান থেকে চলে যাও। এবং যেখানে খুশি সেখানে যাও। কিন্তু এখানে আর থেকো না’।”

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় ফারাহ একটি আহমদিয়া মসজিদের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন; নিরাপদ কোনো আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য।

গত রবিবার শ্রীলঙ্কার ৩টি গির্জা ও ৪টি হোটেল সহ আটটি জায়গায় যে বোমা হামলা হয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত মোট ৩৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শুধু এই নেগোম্বো শহরের সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জার হামলাতেই প্রায় ২০০ জন নিহত হয়েছেন। রবিবারের হামলায় এখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর তার জেরেই খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কান পুলিশ অবশ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঠেকাতে অজ্ঞাত সংখ্যক লোককে আটক করেছে। সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জার আশে-পাশের এলাকাগুলোতে পুলিশ দাঙ্গাবিরোধী অভিযানও চালাচ্ছে। ২০১৪ সালেও শ্রীলঙ্কার পশ্চিমাঞ্চলে মুসলমানবিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিলো।

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারাও মুসলমানদের নিরাপত্তায় ঠিকমতো কাজ করছে না।

কিন্তু পুলিশ বলছে, স্থানীয়রা নেগোম্বোর পাকিস্তানি মুসলমানদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সন্দেহে ব্যাপক পরিমাণে অভিযোগ করছিলো। আর স্থানীয় নাগরিকরা যখন অভিযোগ করে তখন বাধ্য হয়েই পুলিশকে মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে তল্লাশি চালাতে হচ্ছে।

পুলিশ আরো জানিয়েছে, তারা যে ৩৫ জন পাকিস্তানিকে আটক করেছে তাদেরকে নিরাপদ জায়গা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্যই তাদেরকে গোপন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হলেই শুধু তাদেরকে ফিরতে দেওয়া হবে।

ওদিকে স্বজন হারানোর বেদনায় নেগোম্বোর খ্রিস্টানরা এখনো শোকার্ত। বুধবার পর্যন্ত নিহত ২০০ জনের মধ্যে ৪০ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তবে ভারত মহসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রে মুসলমান, হিন্দু এবং খ্রিস্টানরাও আছেন। খ্রিস্টানরা এতোদিন দেশটির কোনো ধরনের সংঘাত এবং কোনো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিজেদের জড়ায়নি। রবিবারের হামলার পর বৌদ্ধদেরকেও খ্রিস্টানদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

স্থানীয় ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মযাজক ফাদার জুড থমাস বলেন, আমাদের শহরটি বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। ২০০৪ সালের সুনামিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিলো নেগোম্বো। সেই ক্ষয়ক্ষতিও কাটিয়েও উঠেছে এই শহর। সুতরাং রবিবারের হামলার ধাক্কাও হয়তো সামলে নিবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এতোদিন মুসলমান আর ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে এখানে বসবাস করতো। এই জায়গাটি সবসময়ই শান্তিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’

Bootstrap Image Preview