দিনাজপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দিনাজপুরের বাসচালক জালাল উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে দিনাজপুর জেলামটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে এই ধর্মঘট পালন করছে পরিবহন শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভোর ৬টার পর থেকে দুরপাল্লার কোনও বাস ছেড়ে যায়নি। একইসঙ্গে দিনাজপুরে ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ দিকে পরিবহন ধর্মঘটের ফলে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
দিনাজপুর জেলামটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বী জানান, চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের কোচচালক জালাল উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট চলছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
দিনাজপুর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদাকাতুল বারী সাদা জানান, রংপুর বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারেশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক নৈশ কোচচালক জালাল উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট চলছে। জালাল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত দিনাজপুরে এই ধর্মঘট চলবে।
পরিবহন ধর্মঘট চলাকালে সকাল থেকে দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে শ্রমিকরা। দুপুরে ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়কের সদর উপজেলা পরিষদের উত্তর পাশের রাস্তায় গাছ ফেলে এবং সরকারি কলেজ মোড়ে ট্রাক দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে।
এ সময় ভয়ে ব্যাপারিচালিত অটোরিক্সার চলাচল কমে যায়। তবে এই রিপোর্ট লিখা দিনাজপুরে থোকাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এ দিকে হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘটের ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। সকালে অনেক যাত্রী অফিস বা অন্যান্য জরুরী কাজে ঘর থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েন। কেউ কেউ বাস না পেয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অটোরিক্সায় গন্তব্যে গেছেন। তবে শহরের আশপাশের এলাকার যাত্রীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি থানার শিকলবাহা এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসচালক জালাল উদ্দিনকে মারধর করায় তার মৃত্যু হয়। নিহত জালাল উদ্দিন দিনাজপুর সদর উপজেলার দরবারপুর হেলেঞ্চাকুড়ি গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে। তিনি শ্যামলী পরিবহনের নাইট কোচের চালক ছিলেন।
নিহত জালালের পরিবারের সদস্যরা জানায়, কোচ নিয়ে চট্টগ্রামে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসার পথে কর্ণফুলি থানার শিকলবাহা এলাকায় পৌঁছলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন লোক নৈশকোচে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা আছে এই অভিযোগে জালাল উদ্দিনকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে মারধর করে আহত করে ফেলে রেখে যায়।
এ সময় নৈশকোচের সহকারী রাফিসহ অন্যরা জালালকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি কিনিকে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৩ এপ্রিল বুধবার তার লাশ দিনাজপুরে নিজ বাড়িতে আনা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
নৈশকোচের সহকারী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাফি (১৯) জানান, ২২ এপিল রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। এ সময় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন লোক চালক জালাল উদ্দিনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়। পরে তাকে মারধর ও নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।