Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জাহালমের কারাভোগ: হাইকোর্টে রুল শুনানিসহ সব কার্যক্রম স্থগিত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০১:২৭ PM
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০১:২৭ PM

bdmorning Image Preview


বিনা অপরাধে জাহালমের তিন বছর কারাভোগের বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলের শুনানিসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। পাশাপাশি এ বিষয়ে দুদকের করা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন(লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে ২১ এপ্রিল দুদক সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি করতে পারেন কি-না- এ বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে দুদক আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন,  চেম্বার আদালত জাহালমের ঘটনায় হাইকোর্টের জারি করা রুলসহ এ মামলার সব কার্যক্রম ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুদক সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে স্পেশাল বেঞ্চ আছে। এ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ বেঞ্চও নির্ধারণ করা থাকে। নির্ধারিত এসব বেঞ্চের বাইরে অন্য কোনো বেঞ্চ এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের একটি রায়ও আছে।

এসব বিষয় বিবেচনা করেই চেম্বার আদালত আদেশ দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালমকে।

এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষদিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। সেটি সেদিন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।

এরপর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করেন।

কারাগারে থাকা ভুল আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম। পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক।

তবে হাইকোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্রসহ (সিএস) যাবতীয় নথি তলব করেন হাইকোর্ট।

দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেন, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই। জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাশগুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। সে অনুযায়ী, জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।

কিন্তু দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন আদালত। আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী, তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। ওইদিনই আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাইকোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে।

এরপর দুদক ২১ এপ্রিল হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়। ওই আবেদনের শুনানি করেই মঙ্গলবার স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি।

Bootstrap Image Preview