Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতিটি পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার করতে চায় জাপাআ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪৬ PM
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


২৩ এপ্রিল পালিত হলো বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস বা পাঠাগার দিবস। এই দিবসকে অনেকে আবার বিশ্ব বই দিবসও বলে। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন-জাপাআ ‘বই পড়ি পাঠাগার গড়ি’- স্লোগানে রাজধানীর কাটাবনে দীপনপুর গ্যালারিতে আয়োজন করে আলোচনাসভা, পাঠাগার উদ্বোধন এবং কবিতা সন্ধ্যার।

আজ মঙ্গলবার বিকালে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় সারাদেশ ১০টি নতুন পাঠাগার উদ্বোধন ও প্রতিনিধিদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। পাঠাগারগুলো উদ্বোধন করেন এশিয়ার এডুকেশন এক্সিলেন্স এওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষাবীদ ও গবেষক প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আহমেদ। এই আয়োজনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাবীদ ও অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৈশর তারুণ্যের বইয়ের সভাপতি তুষার আবদুল্লাহ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ট্রাভেলার ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী।

লাবণ্য রেজা ও মহিমা বাধনের যৌথ সঞ্চালনায় এবং চ্যানেল ২৪ এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুল সাজ্জাত এর সভাপতিত্বে বিশ্ব পাঠাগার দিবসে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও সংগঠক এবং জাপাআ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ইঞ্জি. আরিফ চৌধুরী শুভ।

তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি পাঠাগারে আমরা একটি স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ করতে চাই। এই কর্ণারে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বৃত্তান্ত থাকবে। পাঠক যেন খুব সহজে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে।  মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙ্গালী জাতির পিতাকে প্রতিটি পাঠক যেন নিজ গ্রাম থেকে জানতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই আমরা। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন অহিংস সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাঠাগার আন্দোলনের বিকল্প নাই।

তিনি আরো বলেন, মেঠোপথ থেকে দীর্ঘ ১৬ মাইল দূরে জেলা শহর থেকে বই এনে পড়া একটি ছোট্ট স্কুল পড়ুয়া বালকের জন্য সহজ কিছু ছিল না। দুইচাকার সাইকেলই ছিল আমার একমাত্র বাহন। টিফিনের দুই টাকাও জমিয়ে বই কিনেছি। অভাবের সংসারে বইকে বিলাসিতা ভাববে তাই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছি। এভাবেই আমার স্কুল জীবনে বইপড়ার অভ্যাস আমাকে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন সৃষ্টির জন্য তগিদ দিলো।

তিনি আরো বলেন, আশে পাশে ১০ গ্রামেও কোন পাঠাগার ছিল না। শিক্ষার্থীরা জানতো না পাঠাগার মানে কি? অনেক শিক্ষকও পাঠাগারের সাথে পরিচিত ছিলেন না। স্বাধীনতার পরে নিজ গ্রামে আমি যখন আলোকিত পাঠাগার ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আলোকিত স্কুল গড়ি তখন আমার পরিবার ছাড়া আমি কাউকে পাশে পাইনি। নিজগ্রামে পাঠাগার ও স্কুল গড়েও অনেক বিপদে পড়েছি। অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েছি।  আমি উপলব্ধি করি, মনের বিরুদ্ধে যে পথ সেটি ঘোর অন্ধকার। একমাত্র আলোটাই সত্য। তাই সত্যকে আকড়ে ধরে পথ চলতে হবে। আনপাদের আত্মার ক্রন্দনকে আজ জিজ্ঞেস করেন, সে কোন পথের অনুসারি? সে পথেই চলতে হবে আমাদের। তবেই সত্যের দেখা পাবে।

সত্য কঠিন কিন্তু বইয়ের মতো শক্তিশালী। বিশ্ব সাহিত্যের দুই মহান ব্যক্তি ইউলিয়াম শেক্সপিয়র’ও মিগুয়েল ডি  সারভান্তেস’ তাঁদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সত্যকে বইয়ের ভাষায় লিখে গেছেন। সমাজে পাঠাগারের নেই আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে আজ,  একটি সমাজে সবই আছে কিন্তু শুধু একটি পাঠাগার নাই।

প্রধান অতিথি ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, পাঠাগার আন্দোলন এই সময়ের জন্য একটি আলোক বর্তিকা হিসেবে কাজ করবে যদি পাঠাগার গড়া খুব কষ্টকর। তবুও এই যুবকরা যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সেটির সাথে আমিও একত্ত্বতা পোষণ করলাম। কারণ আমিও ছাত্রজীবনে পাঠাগার করেছি, কিন্তু সেটি টিকেনি। যদি সেই পাঠাগার আজ পযন্ত থাকতো, তাহলে হাজারো বইয়ে সমবৃদ্ধ থাকতো। কিছুদিন আগে জাতীয় পাঠাগার দিবসে আমরা ৪০টি পাঠাগার উদ্ধোধন করেছি। আজ আবার ১০টি পাঠাগার চালু করছি। এভাবেই পাঠাগারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একদিন পাঠাগারে ভরে যাবে দেশ। তবে শুধু পাঠাগার করলে হবে না, সেটি টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও জাপাআকে নিতে হবে। জাপাআর সদস্যরা নিজেরা পরিশ্রম করে যে ভালো কাজ এই সমাজকে উপহার দিচ্ছে সেজন্যে সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের কঠোর পরিশ্রমের সাক্ষি আমি নিজেই। উপযুক্ত সাপোর্ট পেলে তারা একটি অমূলক পরিবর্তন এনে দিতে পারবে সমাজকে। আমি এই সংগঠনের অগ্রগতিতে খুশি। আমি অবাক হচ্ছি এই কঠিন সময়েও গ্রাম থেকে পাঠাগার গড়ার জন্য ছুটে আসেন এই শহরে। আপনাদের ইচ্ছাটা একেবারে খাটি। আপনারা জাগলে আজকের সমাজে যে অন্যায়ের প্রতিযোগিতা তা আর থাকবে না।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বই পড়ি পাঠাগার গড়ি স্লোগানটা আমার কাছে ভালো লাগলো। এই তরুণরা বই পড়ে নিজেকে জানুক। এগিয়ে যাক। কিন্তু কি বই পড়বো? এখনতো বাজারে যা আছে তা হলো কয়েকটি কাগজের বাণ্ডিল। এই সব পড়ে আপনারা কি মজা পান, আমি জানি না। তবে কিছু বই এখনও লেখকরা লেখেন যা পাঠকদের সত্যি সত্যি মনোরঞ্জন দেয়। রবিন্দ্রনাথ, নজরুলের সমকক্ষ্য আমরা আজও কেউ হতে পারিনি। সৃজনশীল লেখা বলতে বোঝায়, যে বই এখন বাজারে বেশি চলে সেটি। কিন্তু এইসব বইয়ে আধুনিকতা থাকলেও বেশিরভাগ বইয়েনই মান নেই। সাহিত্য বোধ নেই।  যে বই মানুষকে সমালোচনার বোধ সৃষ্টি করতে পারে না , সেটি প্রাণহীন বই। আমি আপনাদের সেই বই পড়তে বলবো যে বইতে প্রাণ আছে। পাঠাগার আন্দোলন প্রতিটি পাঠাগারে ভালো বই পৌঁছে দিবো।

তিনি আরো বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার বই যারা লেখেন তারাও আদৌ কতটুকু জেনে পড়ে লেখেন সেটিও আমার সন্দেহ আছে। তাই পাঠাগার আন্দোলনের সদস্যদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে। জানতে হবে আসল আর নকল বইয়ের পার্থক্য। পাঠাগারের মাধ্যমে রক্তপাতহীন সমাজের দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, আগের দিনে যেসকল পাঠাগার ছিল সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ পাঠাগারে সিডি আর চায়ের দোকান বসছে। পাঠাগার আন্দোলন শুধু পাঠাগার গড়লে হবে না, এই সকল পাঠাগারগুলোকে পুনরায় চালুর উদ্যোগও তাদের।

Bootstrap Image Preview