প্রত্যন্ত গ্রামে প্রাসাদের মতো দেখতে বিলাসবহুল বাড়ি। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ১২ বছর। বর্তমানে কেউ এই বাড়িতে বসবাস করেন না। শুধু একজন কেয়ারটেকার আছেন দেখাশোনার জন্য।
বগুড়ার মোকামতলার দেউলি সরকারপাড়া গ্রামে বাড়িটির অবস্থান। অথচ এই গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে টিনের বেড়া। এখানে উঁচু তলার ভবন করার সামর্থ্য নেই কারও।
বাড়িটির মালিক বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের দেউলী সরকারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন টুটুল। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় এখন জেলে।
বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে শিবগঞ্জ উপজেলার নিভৃত গ্রাম দেউলী। মহাস্থান মোকামতলা হয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দৃষ্টিতে আসবে এই বাড়িটি। এলাকার লোকদের কাছে বাড়িটি টুটুলের বাড়ি হিসেবে পরিচিত।
মালিক টুটুল সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। বাড়ির পুরো সীমানাসহ প্রতিটি অবকাঠামো দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে। দূর থেকে মনে হবে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। মূল ফটকটি নাটোরের উত্তরা গণভবনের নকশায় নির্মিত। ভেতরে চারতলা প্রাসাদের প্রথম ইউনিট ও দ্বিতীয় ইউনিটের ওপর চৌকোনা চারটি গম্বুজ উত্তরা গণভবনের মতো। মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পরই বাঁয়ে চোখে পড়বে শ্বেতপাথরের হংস ফোয়ারার চার ধারে পাথরের সান বাঁধানো পুকুর।
দেউলী সরকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, স্কুলজীবনে বাবা-মায়ের ওপর অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন টুটুল। এরপর ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানেই লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করেন এক অবাঙালি নারীকে। এরপর থেকেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। ঢাকার ধানমন্ডিতে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, গাজীপুর টাটকা ফুড প্রডাক্ট ফ্যাক্টরি, গ্রামের বাড়িতে একটি ইটভাটা এবং একটি কোল্ডস্টোরেজ ছাড়াও শতাধিক বিঘা আবাদি জমি রয়েছে টুটুলের। এছাড়াও অনেক ব্যবসা রয়েছে তার। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান টুটুল কীভাবে এত সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা আলোচনা ও রহস্য।
জানা গেছে, গাজীপুরের কিছু ব্যবসা প্রকল্প, নিজ এলাকায় একটি কোল্ড স্টোরেজ, ইট ভাটা এবং প্রাসাদোপম এই বাড়ি শো’ করে তিনি রূপালী ব্যাংক থেকে দেড়শ’ কোটি, যমুনা ব্যাংক থেকে ২০ কোটি এবং অর্থলগ্নি সংস্থা ইউনিয়ন ক্যাপিটাল থেকে আরো কয়েক কোটি টাকা মিলিয়ে অন্তত ২ শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার নামে তিনি কোটি কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নিয়েছেন, গত প্রায় তিন বছর ধরে সেগুলো বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে যে জামানত তিনি ঋণের বিপরীতে গচ্ছিত রেখেছেন তার বর্তমান বাজার মুল্যে ১০ শতাংশও হবে না। তার নিজ গ্রামের লোকেরা জানিয়েছেন, গত ১০ বছরে তিনি এলাকার আ’লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
রাজনৈতিক ভাবে তিনি জাসদ ঘরাণার হলেও নিজ জেলা বগুড়ার দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে তেমন কোন সখ্যতা নেই। কলেজ জীবন থেকে টুটুলকে ঘনিষ্ট ভাবে চেনেন, এমন একজন জাসদ নেতা জানিয়েছেন, তিনি বগুড়ার সুপরিচিত জাসদ নেতা আমিনুল ইসলাম মিঠুর (বর্তমানে মৃত) বাড়িতে থেকে আজিজুল হক কলেজে লেখাপড়া করেন। এরপর মাহমুদুর রহমান মান্না যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি তখন তাঁর হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টুটুল ভর্তি হন। মিছিল মিটিং বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জোরালো ভাবে অংশ না নিয়েও তিনি সিনিয়র জাসদ নেতাদের আস্থাভাজনে পরিণত হন। বিশেষ করে জাসদের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান দাদা’র সাথে গভীর ঘনিষ্টতা তৈরীতে সক্ষম হন তিনি। বর্তমানেও এই গভীর ঘনিষ্টতা বিদ্যমান বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি সহপাঠি এক পাকিস্তানী ছাত্রীর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে তাকে জীবন সঙ্গিনী করে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে তিনি সিরাজুল আলম খানের সহযোগিতা সমর্থন ও পরামর্শে রাজধানীতে ‘‘অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’’ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। স্কুলটির সাফল্য তার জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিলে তিনি ক্রমশ উচ্চাভিলাসী হয়ে উঠেন। ১/১১ এর দু’বছরে তিনি বেশ কিছু ছোট বড় তদ্বিরে সফল হয়েছেন মর্মে তথ্য রয়েছে।