Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশের প্রথম পায়ে হাঁটা রোবট তৈরি করলেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

আবদুল্লা আল মাসুদ, শাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২২ PM
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


সাম্প্রতিক সময়ে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর এবার আরেক বিষ্ময়কর উদ্ভাবন করে বসলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের প্রথম পায়ে হাটা রোবট-লি তৈরি করে বসলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ উদ্ভাবকের দল ফ্রাইডে ল্যাব।

বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের আর্থিক সহযোগিতায় দেশের প্রথম পায়ে হাটা ও কথা বলতে পারা রোবট উদ্ভাবন করেছে তারা। এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ উদ্ভাবক ‘রিবো’ নামে বাংলা ভাষাভাষী রোবট তৈরি করে। যা বাংলাতে কথা বলতে পারলেও হাটাচলা করতে পারে না। তবে ফ্রাইডে ল্যাব দীর্ঘ ২ বছর কঠোর পরিশ্রমের পর হাটাচলা করা ও বাংলায় কথা বলতে পারা এ রোবট তৈরি করে।

এদিকে উদ্ভাবনকারী দল ফ্রাইডে ল্যাবের সদস্যরা হলেন, টিম লিডার নর্থ ইষ্ট বিশ্ব^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ও শাবির সিএসই বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব। এছাড়া টিমের সদস্য হিসেবে রয়েছেন স্থাপত্য বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রুপক, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম ও জিনিয়া

বাংলা স্বরবর্ণ থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি লিপি হল লি যা দেখতে অনেকটা ৯ এর মত ছিল। এ বর্ণটিকে স্বরণে রাখতে রোবটটির নামকরণ করা হয়েছে রোবট-লি। ফ্রাইডে ল্যাবের সদস্যরা ‘আমি লি। আবার আসিয়াছি ফিরে, রোবট হয়ে এই বাংলায়।’ এ স্লোগানে এ রোবটের নামকরণ করেন। এদিকে রোবটের নামকরণে শিক্ষার্থীদের কাছে নাম চাওয়া হলে প্রায় ৭০০ এর কাছাকাছি নাম জমা পড়ে। এর মধ্যে বিশ্ব^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিন সুলতানা রোবটের নাম রোবট-লি নামকরণ করেন।

জানা যায়, রোবট-লি এ রোবটের মূল অংশ প্রোগ্রামিংয়ে কাজ করেছেন নওশাদ সজীব। এছাড়া রোবটের ডিজাইনে মেহেদী হাসান, রোবটের বিদ্যুত সরবরাহ ও সঞ্চালনে সাইফুল ইসলাম, মেকানিক্যাল বিষয়ক কাজসমূহে মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করেছেন জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি।

রোবট-লি ডিজাইনার মেহেদী হাসান রুপক বলেন, আমি রোবটের কাঠামো ডিজাইনে কাজ করেছি।আমি মনে করি এ ধরণের রোবট করতে হলে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি উন্নত মানের ল্যাব দরকার যা আমাদের নেই। তারপরেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এ রোবট তৈরি চেষ্টা করেছি।

এসময় টিমের আরেক সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এ রোবটের ইলেকট্রিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। আসলে আগের যে রোবট (রিবো) তৈরি করা হয়েছিল সেটা হাটাচলা করতে পারে না। আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি রোবট তৈরি করতে যেটা হাটাচলা করতে পারে।

রোবটের কৃত্তিম বুদ্ধিমতা নিয়ে টিমের আরেক সদস্য জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি বলেন, এ রোবটে আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করেছি। ফলে রোবটটি বাংলাতে কথা বলার পাশাপাশি চলাচল করতে পারে। এছাড়া হাত ও পা নাড়ানো এবং অঙ্গভঙ্গি করতে পারে। তবে এতে যে ইনপুট দেওয়া আছে তার আলোকে কথা বলা ও চলাচল করতে পারে বলে জানান তিনি।

রোবটের সার্বিক বিষয়ে নর্থ ইষ্ট বিশ্ব^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ও শাবির সিএসই বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব বলেন, রোবট-লি এর তৈরিতে গত তিন বছর ধরে আমি কাজ করছি। এর সাথে জাভা ও পাইথন নিয়ে কাজ করা হছেছে। আমাদের এ রোরট তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল রোবটকে হাটাচলা করানোর সাথে সাথে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালনা করা। আমি মুলত রোবটের প্রোগ্রামিংয়ের অংশ নিয়ে কাজ করেছি।

এদিকে আইসিটি ডিভিশনের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা অনুদানের কথা উল্লেখ করে তিরি আরো বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা অনুদান পাই। তবে আমাদের এ রোবটকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে যে ধরণের উপাদান বা যন্ত্রপাতির দরকার তা বাইরে থেকে আনতে হবে। যার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এজন্য দেশে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়ে আমাদের এ রোবট তৈরি করতে হয়েছে। তবে আমরা চাইলে এটাকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবো। এসময় তিনি এ প্রকল্প আরো সমৃদ্ধ করতে হলে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এসময় রোবটের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি ভবিষ্যতে রোবট মানুষের পাশাপাশি বাসাবাড়ি, অফিসে কাজ করবে। এজন্য দেশের মধ্যে এধরণের প্রযুক্তি তৈরিতে আমরা আগামীতে কাজ করতে চাই যাতে বাইরে থেকে না নিয়ে আসতে হয়।

এদিকে গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক ফেস্টে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এ রোবটের উদ্বোধন করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়র নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এম জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

Bootstrap Image Preview