রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দু’দিনব্যাপী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিটে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিলেই মিলছে সর্বনিম্ন ১১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি।
আজ (২১ এপ্রিল) শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সম্মেলন। এতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশ নিয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘যারা সিভি জমা দিচ্ছে, তাদের দক্ষতা যাচাই করতে আমরা এখনই সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। সাক্ষাৎকারে যাদেরকে আমাদের কাছে দক্ষ বলে মনে হয়, তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গেই নিয়োগ দিয়ে দিচ্ছি। দুপুর ১২টা থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়োগ দিয়েছি।’
‘এই দুই দিনের সম্মেলন থেকে ৩০০ জনের মতো কর্মী নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের’, যোগ করেন সাঈদ আহমেদ।
তিনি জানান, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাসের পাশাপাশি যারা স্নাতকে পড়ছেন, তারাও সিভি জমা দিতে পারবেন। তার বক্তব্য, ‘যারা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে এবং কম্পিউটার চালাতে পারে, তাদেরকেই আমরা নিয়োগ দিচ্ছি।’
সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘নিয়োগ পাওয়াদের ১৫ থেকে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেখান থেকেও কিছু লোক বাদ যায়, তবে অধিকাংশই টিকে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরটি দেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠানে সাড়ে চার হাজার কর্মী রয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছি এবং ৫০ হাজার দক্ষ জনবল তৈরি করেছি।’
প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয় তাদের প্রতিষ্ঠানের বলেও জানান সাঈদ আহমেদ।
বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৯’ নেওয়া হবে ৮০০ তরুণকে। এ খাতে যাঁরা কাজ পাবেন, তাঁদের কল সেন্টারে কাজসহ বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন ডেটা (উপাত্ত) প্রসেস করা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করা, মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশনের (চিকিৎসকের হাতে লেখা ব্যবস্থাপত্র পড়ে সেটা থেকে ডেটাবেইস তৈরি করা) মতো কাজ করতে হবে। এ ধরনের কাজকে একত্রে বলা হয় বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও।
বিপিও সামিটে জনবল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) মহাসচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, আগের কয়েক বছরে এই সামিট থেকে বেশ কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ৮০০ জনকে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামিট চলাকালে জনবল নেওয়ার জন্য আলাদা একটি জোন থাকবে। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট বুথ থাকবে। সেখানে একসঙ্গে ২০ জনের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা থাকবে। সাক্ষাৎকারে সন্তুষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানেই নিয়োগপত্র দেবেন।
তৌহিদ হোসেন জানান, কেবল জনবল নিয়োগই নয়, আড়াই মাসের বিনা মূল্যে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণের নিবন্ধন করা যাবে। যাঁরা সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন, তাঁদের জন্য চাকরিতে ঢোকার আগে এই প্রশিক্ষণ অনেক উপকারী। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে প্রায় পাঁচ হাজার তরুণকে। এখানে এলেই তাঁরা এ বিষয়ে জানতে পারবেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষের চাকরির সুযোগ রয়েছে বিপিও সেক্টরে। আমরা এ সামিটে তা তুলে ধরার চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘বিপিও সেক্টরে দেশের যেকোনো জায়গায় বসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিও সামিটে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষ তরুণদের এনে চাকরির দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানির অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আগে আমরা প্রযুক্তিপণ্য আমদানিকারক দেশ ছিলাম, বর্তমানে আমরা উৎপাদন ও রপ্তানি করছি।’
বাক্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিপিও সামিট বাংলাদেশ-২০১৯ আয়োজন সফল করার জন্য দেশব্যাপী পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হবে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন চলাকালেও প্রচারণার মাধ্যমে সিভি সংগ্রহ করা হবে।
এর আগে ২০১৬ সালে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এই সম্মেলন থেকে কল সেন্টারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি পেয়েছেন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে প্রথম বিপিও সম্মেলন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছিলেন ২৩৫ জন শিক্ষার্থী।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই দিনের আয়োজনে দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, সরকারের নীতিনির্ধারক, গবেষক, শিক্ষার্থী এবং বিপিও খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
প্রযুক্তি ব্যবসা, বিশেষ করে আউটসোর্সিং ব্যবসা পরিচালনা, ব্যবসার উন্নয়ন ও বিনিয়োগের আদর্শ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে।
এবারের আয়োজনে দেশের আউটসোর্সিং খাতে আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সে বিষয় বিশ্বকে জানানো হবে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে বিপিও খাতের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হবে। বিপিও খাতে দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল তৈরিও এই সামিটের অন্যতম লক্ষ্য। বিপিও খাতে ২০২১ সালের মধ্যে ১ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন আয়োজকেরা।
সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ’-এর আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) আয়োজনে এই সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আয়োজনে অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) ইত্যাদি।