Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সত্যিই কি চা দোকানদার ছিলেন নরেন্দ্র মোদি?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২৫ PM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ভারতে চলছে ১৭তম লোকসভা নির্বাচন। ৭ ধাপের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এই নির্বাচনকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন অনেকে। 

এরইমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সত্যিই চা বেচতেন কিনা তা নিয়ে তৈরি হওয়া সংশয়। 

দেশটির মধ্যপ্রদেশের বডনগর স্টেশনে জীর্ণশীর্ণ যে চায়ের দোকানটি আছে, সে দোকানে বসেই নরেন্দ্র মোদি চা বেচতেন বলে প্রচার রয়েছে। যদিও এখন আর চা পাওয়া যায় না সেখানে। রয়েছে একটি ভাঙাচোরা টিনের ‘স্মারক’। তাতে লেখা- ‘নরেন্দ্র মোদীর চায়ের দোকান। আপনি সিসিটিভি-র নজরে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। আনন্দবাজার বলছে, বেশ কয়েক বছর আগে এই স্টেশন চত্বরটিতে অনেক ভিড় হত। সারি সারি দোকান ছিল চারপাশে। কিন্তু এখন একটি দোকানও নেই সেখানে।

বছর দুয়েক আগে নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন এই স্টেশন চত্বরে। তার আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও রেল মন্ত্রণালয় ৮ কোটি টাকা খরচ করে পুরো স্টেশনটি নতুন করে সাজায়। তবে ‘মোদী’-র চায়ের দোকানটি অবিকল পুরনো অবস্থাতেই রেখে দেয়া হয়েছে।

বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে তথ্য জানার অধিকারে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই স্টেশনে নরেন্দ্র মোদী চা বেচেছেন, এমন কোনও প্রমাণ কি আছে? রেল মন্ত্রণালয় উত্তর দিয়েছিল- না। সেই জবাব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করেছে মোদী সরকার।

বিষয়টিকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ বলেই ভাবছেন ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ভোটে ভারতীয়দের নজর কাড়তেই ‘চা-ওয়ালা’ ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন মোদী, মনে করেন তারা।

চলমান লোকসভা নির্বাচনে মোদীর সেই চায়ের দোকানটি আবারও আলোচনায় এসেছে। কয়েকদিন আগে ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, ‘বডনগর স্টেশনে মোদী যে কেটলিতে চা বেচতেন এখনও পর্যন্ত সেই কেটলি কেউ দেখেননি। আজ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি যিনি মোদীর হাত থেকে চায়ের পেয়ালা নিয়েছেন।’

একইরকম বক্তব্য এসেছে দেশটির হিন্দু পরিষদের সাবেক নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ারের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, ‘মোদীকে চা বেচতে কখনও দেখা যায়নি। শুধু ভোটব্যাংক বাড়াতে চা-ওয়ালা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন মোদী।’

কংগ্রেস নেতারাও এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আবারও অনুসন্ধানে নেমেছিলেন দেশটির সাংবাদিকরা। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তির কাছে গিয়ে তারা প্রশ্ন করেন - সত্যিই কি মোদী কখনও চা বেচেন নি? চা বানিয়ে খাওয়ান নি কাউকে? বডনগর স্টেশনের এই জরাজীর্ণ চায়ের দোকানটি তাহলে কার?

স্টেশনের কাছেই দোকান করেন ষাটের বেশি বয়েসী রমনজি তাখাজি। তিনি বলেন, ‘মোদীকে কখনও চা বেচতে দেখিনি। তবে তার বাবা দামোদর দাসের চায়ের দোকান ছিল। আর সেটা স্টেশনের ভেতরে রাখা ওই টিনের দোকানটি নয়। স্টেশনের বাইরে ছোট্ট একটি দোকান চালাতেন মোদীর বাবা।’

তাহলে স্টেশনের সেই পুরনো দোকানটি কার? এমন প্রশ্নে তিনি হেসে বলেন, ওটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেখুন, ওই এক চায়ের দোকানই আছে সেখানে। অথচ আশপাশের একশ’দোকান উচ্ছেদ করে দিয়েছে প্রশাসন। সেসব দোকানের কর্মচারীরা এখন বেকার।

একটু দূরেই এক বৃদ্ধাশ্রম চালান মোদীর দাদা সোমভাই। সেখানকার এক বৃদ্ধ আবাসিক জানান, তারাও দেখেন নি কোনোদিন।  

সাংবাদিকরা এরপর খুঁজে পান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্কুলের বন্ধু জাসুদ খানকে। যিনি ওই এলাকার একটি মসজিদের নিচে দোকানদারি করেন। তাকেও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘চা তো ও বানাত না! তার জন্য অন্য লোক ছিল। কিন্তু স্টেশনের পাশেই আমাদের বি এন হাইস্কুল। কচ্চিৎ-কদাচিৎ ছুটির পরে সময় পেলে বাবা-কাকাকে সাহায্য করতে যেত।’

Bootstrap Image Preview