Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

রুহুল আমিন আটক হওয়ায় সুবিচারে আশাবাদী নুসরাতের পরিবার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৯ AM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৯ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রুহুল আমিনকে আটক করার পর নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, বোনের হত্যার সুবিচার পাবো বলে আমরা এখন আশাবাদী।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর থেকেই নানাভাবে অভিযোগের তীর ছিলো তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো স্বয়ং নুসরাতের পরিবারেরও। নুসরাতের পরিবার শুরু থেকেই বলে আসছিলো রুহুল আমিনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্দনেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

অবশেষে পিবিআই রুহুল আমিনকে আটক করায় খুশি নুসরাতের পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীরা। এমন প্রভাবশালী নেতাকে আটক করায় এ হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের আশাবাদী তারা।

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নুসরাতের ভাই বলেন, তিনি প্রমাণ করেছেন অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, কোনো ছাড় নেই। অপরাধী যতো শক্তিশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। আশাবাদী নুসরাতের ছোট ভাই রায়হানও।

নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা মানিক বলেন, বুকের ভেতর দাউ দাউ করছে। আমি শুধু মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নুসরাতের এলাকার মানুষ জানায়, মূলহোতাদের ধরে ফেলেছে পুলিশ। এখন শুধু বিচারের কাজ বাকি। আশা করা যায় এখন সুবিচার পাওয়া যাবে।

এদিকে, রুহুল আমিন গ্রেফতার হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন সোনাগাজী স্থানীয় কয়েকজন জন প্রতিনিধি। তারা বলেন, সাবেক জামায়াত নেতা সিরাজ উদ-দৌলার মূল খুঁটির জোর ছিলো রুহুল আমিন। তার মদদেই সিরাজ উদ-দৌলা এবং তার সহযোগীরা নুসরাতকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু সিরাজের সঙ্গে মিলে উপকর্ম নয়। পুরো উপজেলার সব কিছুতেই প্রভাব বিস্তার করতো এই রুহুল আমিন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ফয়জুল কবির বলেন, কাগজে-কলমে আমিই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমিতো রিজাইন করিনি। আমাকে বাদ দিয়ে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য হাজি রহিম উল্লাহকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। এরপর তার এবং জেলা কমিটির লোকজনের দাপটে প্রথমে আমি সক্রিয় হতে পারিনি। পরে রুহুল আমিন কিভাবে সভাপতি হয়েছেন তা আমার জানা নেই।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বিকম বলেন, নুসরাত মৃত্যুর ঘটনায় আমরা শোকাহত। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় এরইমধ্যে সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মুকছুদ আলমকে বহিষ্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের ব্যাপারেও অনেকে বলছেন। প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নুসরাতের পরিবার বলছে, ২৭ মার্চে নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর রুহুল আমিনের কথা বলেই সিরাজ উদ-দৌলা তাদের হুমকি দিয়েছিলো। সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পরে তার পক্ষে যারা মানববন্ধন করেছে তাদের ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেননি রুহুল আমিন।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া শাহদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর তিনি দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যায় । বাইরে গিয়ে মোবাইল ফোনে বিষয়টি রুহুল আমিনকে জানায়। প্রত্যুত্তরে রুহুল আমিন বলেন, আমি জানি। তোমরা চলে যাও।

গতকাল শুক্রবার অভিযান চালিয়ে রুহুল আমিনকে আটক করে পিবিআই। পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা রুহুল আমিনকে আটক করেছি এবং তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি।

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে তারা চাপ দেয়। ২৭ মার্চ সিরাজের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছিল।

দগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত।

শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এজহারের ৮জন গ্রেফতারসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। সিরাজ উদদৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই চারজনের স্বীকারোক্তিতেই নুসরাত হত্যার ঘটনায় রুহুল আমিনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে।

বাকি আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজ উদদৌলাকে ৭ দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে ৫ দিন, জাবেদ হোসেন ৭ দিন, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, আবছার উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, শামীম ও যোবায়ের হোসেনকে ৫ দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।

 

Bootstrap Image Preview