১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সালের এই দিন বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভাঙ্গুড়ার গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এম হোসেন আলী। তখন তিনি ভারতের কলকাতায় পাকিস্তান দূতাবাসে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দিনটি উপলক্ষে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে হোসেন আলী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহণের পরের দিন ১৮ এপ্রিল এম হোসেন আলী তার মিশনের ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের আনুগত্য ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে তিনি দূতাবাস ভবনের শীর্ষ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এটা ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা যা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস্য হিসাবে কাজ করে।
তখন থেকে হোসেন আলী ভারতে বাংলাদেশ মিশনের প্রথম প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন এবং স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত ওই পদে কর্তব্যরত ছিলেন।
যুদ্ধকালে সেদেশে বাংলাদেশের শরনার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের ব্যবস্থাসহ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সরকারের সক্রিয় সহায়তা প্রদানে হোসেন আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন আলীকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেন।
এসময় যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার মনোভাব ইতিবাচক ও দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সহযোগিতা প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন।
হোসেন আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সত্যিকারের দেশ প্রেমিক ছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ২ জানুয়ারি কানাডার অটোয়াতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তার পৈত্রিক স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গরীব মানুষের কল্যাণে ওয়াকফ করে গেছেন।