ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে মারপিটের শিকার হয়েছেন হাসপাতালের তিন নার্স। এ ঘটনায় আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে নার্স আহত হওয়ার ঘটনায় ফমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি সভায় মিলিত হয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাস্থ্য সেবা দিবস উপলক্ষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে স্টাফ নার্সদের রুমটি বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে জনি নামের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক নার্সদের রুমের বেলুন সুই দিয়ে নষ্ট করতে থাকেন।
এতে উক্ত চিকিৎসককে বাধা দেন নার্সদের কয়েকজন। সেই বাধা উপেক্ষা করেই সুই দিয়ে বেলুনগুলো ফুটো করতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে সিনিয়র নার্স বিথি রানী দাস ওই চিকিৎসককে বাধা প্রদান করেন এবং বেলুনগুলো নষ্ট না করতে অনুরোধ করেন।
কিন্তু ওই চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে নার্সদের উদ্দেশে আজেবাজে কথা বললে নার্সরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় দুপক্ষের মাঝে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক উত্তেজিত হয়ে বিথি রানী দাস, শান্তা ও কাকলীকে চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেন এবং চড়, কিলঘুষি মারেন।
চিকিৎসকদের হামলায় তিনজন আহত হন। এদের মধ্যে শান্তা ও কাকলীর মাথায় গুরুতর আঘাত লাগায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষই এ সময় একে অপরকে দায়ী করে বিক্ষোভ করে।
দুপক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। দুপক্ষকে শান্ত করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। তারা দুপক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকের হাতে নার্সদের মারপিটের ঘটনার ছবি তুলতে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কয়েকজন সাংবাদিককে নাজেহাল করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ সময় তারা সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হাসপাতাল চত্বর থেকে বের করে দেন।
স্টাফ নার্স বিথি রানী দাস জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে বেলুনগুলো ফাটানোর বিষয়টি জানতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তিনি বলেন, সেবা সপ্তাহ চলার কারণে আমরা কোনো আন্দোলনে যাচ্ছি না। তবে সুষ্ঠু বিচার না পেলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, একজন চিকিৎসককে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করাটা শোভনীয় নয়।
তারা জানান, চিকিৎসকদের গায়ে হাত উঠানো হয়েছে। এ সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
এদিকে চিকিৎসকদের হাতে নার্সদের লাঞ্ছিত ও মারপিটের ঘটনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক এক জরুরি সভায় মিলিত হন। সেই সভায় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিনিয়র চিকিসকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা থেকে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং পুলিশ সুপারের ১ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. খবির জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবে সে মোতাবেক কাজ করা হবে। অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।