ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি শুধুমাত্র একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করবেন- এমন নির্দেশনা দিয়ে চিফ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ১৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সার্কুলার জারি করা হয়।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারির কথা সাংবাদিকদের জানান।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নারী নির্যাতনের ঘটনা, বিশেষ করে ফেনীর কলেজছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত। ঠিক সেই মুহূর্তে সর্বোচ্চ আদালত থেকে এমন নির্দেশনা এলো।
সার্কুলারে বলা হয়, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ বর্ণিত অপরাধ সংঘটনে ওয়াকিবহাল ব্যক্তির জবানবন্দি উক্ত আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়। অপরাধের তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে লিপিবদ্ধকৃত উক্ত জবানবন্দি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মসের গোচরীভূত হয়েছে যে, বর্তমানে বেশকিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী বা শিশুদের জবানবন্দি পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। একজন পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নারী বা শিশু ভিকটিম ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে সংকোচ বোধ করেন। ফলে এরূপ নির্যাতনের শিকার শিশু বা নারী ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে অনেক সময় ইতস্তত বোধ করেন।’
সার্কুলারে আরও বলা হয়, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক। এতে নারী ও শিশু ভিকটিমরা সহজে ও নিঃসঙ্কোচে তাদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে পারবেন। এমতাস্থায়, সংঘটিত অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অর্পনেরজন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণকে নির্দেশিত হয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেল।’
তবে, সংশ্লিষ্ট জেলায় বা মহানগরীতে নারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্মরত না থাকলে অন্য কোনো যোগ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে উক্ত দায়িত্ব অর্পন করা যেতে পারে বলেও সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
এ সার্কুলারের নির্দেশনাবলী অনুসরণে কোনো সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনার জন্যও বলা হয়েছে।