Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

লাশের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে নুসরাতকে বিদায় জানালেন বাবা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৬ PM
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মাদরাসারছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জানাজা শেষে চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে কবরে শায়িত করেন বাবা মাওলানা মুসা মানিক ও বড় ভাই নোমানসহ আত্মীয়-স্বজনরা। এ সময় কবরস্থান এলাকায় তৈরি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। নুসরাতের বাবা ও ভাইয়ের কান্নায় ভিজে যায় কবরের মাটি।

জানাজায় ইমামতি করেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা মানিক। জানাজা শেষে মেয়ের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেই সঙ্গে মেয়েকে জানান অশ্রুসিক্ত বিদায়।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে জানাজার পর সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী আল হেলাল একাডেমির পাশে সামাজিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় নুসরাতের মরদেহ।

নুসরাত জাহান রাফির জানাজায় বোনের জন্য ক্ষমা চাইলেন বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। জানাজা-পূর্ব বক্তব্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন হাসান নোমান।

তিনি বলেন, পাঁচদিন ধরে সারাদেশের মানুষ আমার বোনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা বোনকে সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দেশবাসীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমার বোনের হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নুসরাতের বাবা মাওলানা মাওলানা এ কে এম মুসা বলেন, আমার মেয়ের আত্মা তবেই প্রশান্তি পাবে, যদি সে সুবিচার পায়। আমি আমার মেয়ের হত‌্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে নুসরাতকে কবরে শায়িত করেন বাবা মাওলানা মুসা মানিক ও বড় ভাই নোমানসহ আত্মীয়-স্বজনরা। এ সময় কবরস্থান এলাকায় তৈরি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। নুসরাতের বাবা ও ভাইয়ের কান্নায় ভিজে যায় কবরের মাটি।

এর আগে নুসরাতের জানাজা পড়ান বাবা মাওলানা মুসা মানিক। জানাজায় উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন নুসরাতের বড় ভাই নোমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আলাউদ্দিন নাসিম, জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিকেএম এনামুল করিম, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ইউএনও সোহেল পারভেজ প্রমুখ।

বিকেলে নুসরাতের মরদেহ পৌঁছে গ্রামের বাড়ি। সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার মেজো মৌলভী বাড়িতে মরদেহ এসে পৌঁছলে সর্বস্তরের মানুষ নুসরাতকে দেখতে আসে। এ সময় ওই বাড়িতে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। পড়ে যায় কান্নার রোল।

এর আগে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে নুসরাতের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সকালে নুসরাতের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বড় ধরনের বার্নের কারণেই নুসরাতের মৃত্যু হয়েছে। তবে তার চিকিৎসায় সব ধরনের চেষ্টাই করা হয়। ময়নাতদন্তে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তার (নুসরাত) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন। অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনার রিপোর্ট পেলেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।

৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। ওই সময় তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করেছে এক ছাত্রীর এমন সংবাদে ভবনের চারতলায় যান তিনি। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

এরই মধ্যে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত জাহান রাফি মারা যান।

Bootstrap Image Preview